পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নাম বদলের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মোদির সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ অনুরোধ জানান। পরে সাংবাদিকদের নিজেই তথ্যটি বলেন তৃণমূল নেত্রী।
বৈঠক ভালো হয়েছে জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি তার সব কথা শুনেছেন এবং দাবিগুলো খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। রাজ্যের নাম বদলের বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখার অনুরোধ জানিয়ে বলেছি, অনেকদিন ধরে বিষয়টি পড়ে রয়েছে, দয়া করে এটি দেখুন।
অবশ্য বহুদিন আগেই রাজ্যের নাম বদলে ‘বাংলা’ রাখার প্রস্তাব কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষ্য হচ্ছে, নাম বদল করলে প্রতিবেশী দেশের (বাংলাদেশ) সঙ্গে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে।
বিধানসভা নির্বাচনের পরে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে প্রথম বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এই বৈঠক ঘিরে তুমুল জল্পনা ছিল ভারতের রাজনৈতিক মহলে।
মমতা বলেন, জনসংখ্যা বেশি হওয়ার পরও অন্য রাজ্যের তুলনায় কম ভ্যাকসিন পেয়েছি। পশ্চিমবঙ্গে আরও ভ্যাকসিনের প্রয়োজনের কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি।
মমতা আরও বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আরটি পিসিআর টেস্ট করা দরকার। আমার ডাবল ডোজ নেওয়া আছে, কিন্তু করোনা টেস্ট করাবো কোথায়? এখন না হলে পরে দেখা করবো।
পশ্চিমবঙ্গে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের রাজনীতিতে এখন অন্যতম প্রধান বিরোধী মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় দুই বছর পর গত সোমবার দিল্লিতে গেছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি বিরোধী ফ্রন্টকে পুনর্জীবিত করা এবারের দিল্লি সফরে তার অন্যতম উদ্দেশ্য।
বিজেপিকে হারাতে সবাইকে একজোট হতে হবে: মমতা
ভারতের দিল্লিতে কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বৈঠকের পর তিনি বলেছেন, কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে হারাতে সকলকে একজোট হতে হবে। একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি একা কিছু করতে পারব না। বৈঠকে কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীও উপস্থিত ছিলেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিরোধীরা একজোট হয়ে লড়ার পরিকল্পনা করছে। সেই প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এদিকে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের আগে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বলেন, আমি রাজনৈতিক জ্যোতিষী নই। বিজেপি বিরোধী প্রধান নেতা কে হবেন তা নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। তবে অন্য কেউ প্রধান বিরোধী মুখ হলে আমার কোনো আপত্তি নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই জবাবের মধ্য দিয়ে মমতা যেমন জাতীয় রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী নেতা হয়ে ওঠার প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বলেননি, আবার ‘না’ ও বলেননি।
পাঁচ দিনের সফরে বর্তমানে দিল্লি অবস্থান করছেন মমতা। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সর্ব শক্তি দিয়ে লড়াই করেছে। কিন্তু মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বগুণে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই সাফল্যের পর ভারতের রাজনীতিতে মমতা ব্যানার্জি গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। যিনি আগামী নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী শক্তিশালী জোট গড়তে সক্রিয় হয়েছেন।
বুধবার সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, আমরা পেগাসাস ইস্যু ও করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। বিরোধী দলগুলোর একজোট হওয়ার বিষয়ে কথা বলেছি। বৈঠক খুবই ভালো হয়েছে। আমার মতে, বিজেপিকে হারাতে হলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি একা কিছু করতে পারব না। আমি লিডার নই, ক্যাডার। আমি স্ট্রিট ফাইটার। সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
এদিকে দিল্লিতে তৃণমূল এমপিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। দলের রাজ্যসভা এমপি সুখেন্দুশেখর রায়ের বাড়িতে ওই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে তৃণমূল এমপি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মমতা ব্যানার্জিকে আমরা প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে চাই। এখন দেশের মধ্যে তিনিই বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের প্রধান মুখ। তার নেতৃত্বেই বিজেপিকে সরানো সম্ভব। দলের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আমরা সব এমপি এই প্রস্তাবই দিয়েছি। আমরা তার নেতৃত্বেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে মোদি সরকারকে উত্খাত করতে চাই।
অন্যদিকে ইসরাইলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করে বিরোধীদের ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে গতকাল বুধবারও উত্তাল ছিল সংসদের অধিবেশন। সেখানে তৃণমূল এমপি অভিষেক ব্যানার্জিও সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে শামিল হন। বিক্ষোভের মুখে সংসদের অধিবেশন আজ সকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন আড়িপাতার মাধ্যমে মোদি সরকার গণতন্ত্রের হূদয়ে আঘাত করেছে। এর জবাব তাদের দিতে হবে। তবে বিজেপি’র অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে সংসদ অচল করা হচ্ছে।
জিজিএনটোয়েন্টিফোর.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।