করোনা ভাইরাসের বিস্তারে মধ্যেও মানুষের মধ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের প্রবণতা বাড়ছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার এ খাত থেকে মোট ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল। কিন্তু জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসেই প্রায় সমপরিমাণ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন (নিট বিক্রি) মানুষ।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১৯ হাজার ৪৫ কোটি টাকার। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৫ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। অর্থাত্ গত চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে তিন গুণ।
সঞ্চয়পত্র সরকারের জন্য ঋণ। সরকার বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য অভ্যন্তরীণ উত্স থেকে ঋণ নেয়। মূলত ব্যাংক খাত থেকে ঋণ ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে এ ঋণ নেওয়া হয়। সঞ্চয়পত্রে যারা বিনিয়োগ করে, তাদের নির্দিষ্ট সময় পর পর সুদ দেওয়া হয়। এ খাতে মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগ হলে সুদ বাবদ সরকারকে বেশি পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়।
এ খাতে বিনিয়োগকারীদের যে হারে সুদ দেওয়া হয়, তা ব্যাংকের বিদ্যমান সুদ হারের চাইতে বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ কারণে অনেকে ব্যাংকে না গিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। এ নিয়ে ব্যাংকগুলো আপত্তি জানিয়ে আসছে। তাদের দাবি, এ খাতের সুদের হার কমানো হোক। অন্যদিকে যাদের উদ্দেশ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে, তাদের বদলে অন্যরা এ খাতে বিনিয়োগ করে সরকারের দেওয়া সুবিধা নিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার সঞ্চয়পত্রে সুদের হার না কমিয়ে বরং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশকিছু শর্ত আরোপ করেছে, যাতে যে কেউ এসে ঢালাওভাবে টাকা বিনিয়োগ করে সরকারের দেওয়া সুবিধা না নিতে পারে। এর ফলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমবে বলে ধারণা করা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, নিরাপদ বিনিয়োগ এবং ব্যাংকের চেয়ে সুদ বেশি হওয়ায় এ খাত এখনো মানুষকে বিনিয়োগে টানছে।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪৬ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। এই সময়ে মূল টাকা উত্তোলন করা হয়েছে ২৭ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। মূল টাকা উত্তোলনের পর বাদবাকী অর্থকে নিট বিক্রি হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই হিসেবে আলোচ্য সময়ে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১৯ হাজার ৪৫ কোটি টাকা।