মেঘলা দিনের সূর্য আর পাকিস্তানের রাজনীতি- আচারে, স্বভাবে দুই-ই সমান! ক্ষণে উজ্জ্বল, ক্ষণে ম্লান। এই ঝকঝকে তো পরক্ষণেই ঘোলাটে! উচ্ছন্নে যাওয়া জুয়াড়ির আকাশ-কুসুম স্বপ্নের মতোই-সকালে হৈ হৈ করে লাফিয়ে বিকালেই চিৎপটাং! গিরগিটির মতোই নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে রং পালটাচ্ছে নেতারা।
একদিন আগেও যে প্রধানমন্ত্রীর গদি দখল পুরো পাকিস্তান এফোঁড়-ওফোঁড় করছিল, দিন ফুটতেই সেই আবার ‘মহাহাতেম তাঈ’। গত তিন দিনের দড়ি টানাটানি শেষে হঠাৎ প্রধানমন্ত্রীর ভাগ ছেড়ে দিয়ে সেই খেলাই দেখালেন দেশটির সরকার গঠন কারিশমার মধ্যমণি পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলটির পোস্ট-সেন্ট্রাল এক্সিকিউটিভ কমিটির (সিইসি) অধিবেশনের পরে একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থিতা তিনি চান না। কারণ পিপিপির ফেডারেল সরকার গঠনের ম্যান্ডেট নেই।
তবে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী করতে অকুণ্ঠ সমর্থন দেবে তার দল। কিন্তু নওয়াজ সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকবে না তার দল। জিইও নিউজ, ডন।
বৃহস্পতিবার নির্বাচনের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নিজ শর্ত বহাল রেখে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সঙ্গে হাত মেলানোর কথা থাকলেও আচমকাই এ খেলায় ‘দাবার পাশা’ উল্টে দিলেন বিলাওয়াল। তবে প্রধানমন্ত্রিত্ব না চাইলেও প্রেসিডেন্ট পদ চেয়েছে দলটি।
প্রতিবেদন অনুসারে, পিপিপির বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, তিনি তার বাবা আসিফ আলী জারদারিকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেখতে চান।
আরও বলেছেন, ‘আমি এটা বলছি না কারণ তিনি আমার বাবা। আমি এটা বলছি কারণ দেশ এই মুহূর্তে এক বিশাল সংকটের মধ্যে রয়েছে।
বিলওয়াল বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ পদের জন্য তার বাবাই একমাত্র যোগ্য প্রার্থী। এদিকে একের পর এক মুখ থুবড়ে পড়ছে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ। শুরু থেকেই ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ের আশা থাকলেও হেরে গেলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জনপ্রিয় নেতা ইমরান খানের কাছে। এরপরই যেন অমঙ্গলের ছায়া পড়েছে তার (নওয়াজের) দলে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে জোটের দৌড়ে নেমেও লাভ হলো না কোনো। শেষ ভরসা বিলওয়ালও এখন হাতছাড়া। সব মিলিয়ে সেনাবাহিনীর আশীর্বাদেও পার পেলেন না নওয়াজ।
এরই মধ্যে একাই সরকার গঠন করার ঘোষণা দিয়েছে খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য পদে প্রার্থী নির্বাচনের কথা জানিয়েছে।
এছাড়া পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় সরকার গঠনের জন্যও প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। রাজনৈতিক চক্রান্ত মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে দলটি।
মঙ্গলবার পিটিআইয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাত দিয়ে ডন জানিয়েছে, দলটি ইতোমধ্যেই কেন্দ্র, পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখোয়াতে সরকার গঠনের লক্ষ্যে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে।
পূর্ণাঙ্গ ফলাফল অনুসারে, এবারের নির্বাচনে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে পিটিআই। স্বতন্ত্র ১০১টি আসন পেয়েছে। যার মধ্যে পিটিআই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছে ৯৩টি আসন। পিএমএল-এন ৭৫টি এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪টি আসন পেয়েছে।
তবে মঙ্গলবার পাকিস্তানের সাবেক ফেডারেল মন্ত্রী ও পিটিআই নেতা হাম্মাদ আজহার দাবি করেছেন, পিএমএল-এন মাত্র ১৭টি এনএ আসন এবং ৩০-৪০টি পাঞ্জাব বিধানসভা আসন জিতেছে।
পিএমএল-এনের সভাপতি শাহবাজ শরিফ বলেছেন, পিটিআই সরকার গঠন করতে পারলে তাদের স্বাগত জানানো হবে। মঙ্গলবার রাজধানী ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেছেন, পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংসদের নিম্নকক্ষে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে তার দল (পিএমএল-এন) সংসদে বিরোধী আসনে বসতে প্রস্তুত।
১৮টি আসনে নির্বাচন কারচুপির বিরুদ্ধে পিটিআইয়ের দায়ের করা পিটিশন খারিজ করেছে লাহোর হাইকোর্ট (এলএইচসি)। রোববার দেশটির সংবাদমাধ্যম সামা টিভির খবরে বলা হয়েছে, ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে বেশ কয়েকটি পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল।
এদিকে নতুন সরকারের তোড়জোড়ের মধ্যেই শেষ হতে চলেছে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের মেয়াদ। পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেওয়ার আগেই নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে পারে দেশটিতে।
দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। অপরদিকে জাহাঙ্গীর খান তারিন সম্প্রতি গঠিত ইস্তেহকাম-ই-পাকিস্তান পার্টির (আইপিপি) চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। নির্বাচনের ঝড় শেষ হতে না হতেই রাজনীতির পথ ছেড়ে দিলেন তিনি। সোমবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।