প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরই যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন।
মাদক-অস্ত্র চোরাচালান, জমি দখল করিয়ে দেওয়া, হোটেলে নারীদের দিয়ে যৌন বাণিজ্য থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জনের অভিযোগে গত শনিবার পাপিয়াকে গ্রেপ্তার এখন সারা দেশে আলোচিত ঘটনা। নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পাপিয়া। গ্রেপ্তারের পর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বনানীর সেতু ভবনে ঢাকা এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের পিপিপি প্রকল্পের এক চুক্তি সই অনুষ্ঠান শেষে পাপিয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
জবাবে তিনি বলেন, “এই ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানতেন। তিনিই নির্দেশ দিয়েছেন, তাকে (পাপিয়াকে) গ্রেপ্তার করার জন্য এবং এটা তদন্ত করে বিষয়টি বিচারের আওতায় আনার জন্য।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “কাজেই এখানে কেউ অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে, এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমল অ্যালাউ করবে না। তার সরকার এখনও অ্যালাউ করছে না, ভবিষ্যতেও করবে না।”
এ বিষয়ে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
গত শনিবার ঢাকা বিমানবন্দর এলাকা থেকে শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন এবং তাদের দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
অপকর্মের কারণে ছাত্রলীগ-যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অব্যাহতি দেওয়ার মতো যুব মহিলা লীগের ক্ষেত্রেও এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে কি না সেই প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের দলের অভ্যন্তরের বিষয়, যেটা দলের অভ্যন্তরে আলোচনা হবে।“এমনিতেই যুব মহিলা লীগের সম্মেলনের সময় চলে এসেছে। মার্চে তাদের মেয়াদ শেষ হবে। তাদের সম্মেলন এমনিতেই করতে হবে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেই পাপিয়ার এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসা অভিযানের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল মন্ত্রী কাদেরের কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, “এখন বাংলাদেশ কত কোটি লোকের দেশ? বাংলাদেশে এর আগে যারা ক্ষমতায় ছিল সেই বিএনপি কোনো নেতা কোনো কর্মীকে অপকর্মের জন্য শাস্তি দিয়েছে?
“যে সৎ সাহস শেখ হাসিনা দেখিয়েছে, এই সৎ সাহস বাংলাদেশে আর কোনো রাজনৈতিক দল দেখাতে পারেনি।”
কাদের বলেন, “নিজের দলের লোককে অপকর্মের জন্য, অপরাধের জন্য আমরাই বাংলাদেশে প্রথম একটা উদাহরণ সবার চোখের সামনে বাস্তবে সৃষ্টি করেছি।
“বিএনপিতে তো তাদের দলের এতো অপরাধ, এতো দুর্নীতি একটা ঘটনার জন্য তাদের কাউকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়নি।”
“আমরা একটি বড় দল; এই দলে ভালো-খারাপ সবই আছে। সব আমরা ভালো লোক, এই দাবি আমি করি না। তবে খারাপ লোকদের চিহ্নিত করে, খারাপকে তার অপকর্মের জন্য শাস্তি দেওয়ার বিধান এই দলে আছে।”
জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে নিতে সরকার নিজেই দলের ‘মুখরোচক’ অপকর্ম প্রকাশ করছে বলে বিএনপি নেতাদের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপি অভিযোগ আনবেই, অভিযোগ আনা বিএনপির স্বভাব। অভিযোগ আনা ছাড়া বিএনপির আর কোনো রাজনীতি নেই।”
দলের যে সব নেতা পাপিয়া-সম্রাটের পেছনে থেকে ইন্ধন দিচ্ছেন তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত সরকার নিচ্ছে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সবার ব্যাপারে ভাবনা আছে, কারা কাদের পেছনে আছে। কত রকমের শাস্তি আছে, অনেকে হয়তবা দৃশ্যপটের বাইরে আছে।
“দেখা গেছে, তারা দলে বা সরকারের কোনো পদে পদায়ন পাচ্ছে না, এটাও তো শাস্তি।”