অর্থ ও মানব পাচারের জন্য আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের নির্বাচনী আসনে (লক্ষ্মীপুর-২) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের এক যৌথসভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের যৌথসভাটি শুরু হয়। সন্ধ্যা ৬টায় এ সভা শেষ হয়। দিনব্যাপী এ সভায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকারের ১১টি পৌরসভা ও ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের নৌকার মাঝি নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল এমপি নির্বাচিত হন। কুয়েতে পাপুলের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের শুরুতে মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগ ওঠে। পরে ওই মামলায় তিনি কুয়েতে গ্রেপ্তার হন। গত ২৮ জানুয়ারি পাপুলকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন কুয়েতের আদালত। পাশাপাশি ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার জরিমানা করা হয়। তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম কুমিল্লার সংরক্ষিত আসনের স্বতন্ত্র এমপি। গত ২২ ফেব্রুয়ারি পাপুলের এমপি পদ বাতিল ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। তাঁর আসনে আগামী ১১ এপ্রিল উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, যৌথসভায় প্রথম ধাপে অনুষ্ঠেয় ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ২৫০টিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। বাকি ১২১টির প্রার্থী আগামীকাল সোমবার চূড়ান্ত করা হবে।
সভায় ১১ পৌরসভায় দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। পৌরসভায় নৌকার মাঝিরা হলেন মো. গিয়াসউদ্দীন চৌধুরী, দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়); মো. আসলাম, সেতাবগঞ্জ (দিনাজপুর); সুশান্ত কুমার দাস, নওয়াপাড়া (যশোর); মোহাম্মাদ লিয়াকত আলী তালুকদার, ঝালকাঠি; এ এফ এম ডি রেজা, ভাঙ্গা (ফরিদপুর); আলমগীর চৌধুরী, চকরিয়া (কক্সবাজার); মকসুদ মিয়া, মহেশখালী (কক্সবাজার); মো. রফিকুল ইসলাম (খোকন), সোনাগাজী (ফেনী); জহিরুল হক রায়হান, কবিরহাট (নোয়াখালী); আব্দুল মালেক, লাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) ও মোহা. জহুরুল ইসলাম, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম)।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে গতকাল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ ফায়িজ উদ্দিন শিপনসহ অন্তত ১২ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। দুপুরে শহরের ওয়েলকাম চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
হামলার শিকার শেখ ফায়িজ উদ্দিন শিপনের ভাষ্য, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক এম আর মাসুদ, আনোয়ার হোসেন বাহার ও আরিফরা পরিকল্পিতভাবে তাঁর নেতাকর্মীদের মারধর করেছে। মাইকে উসকানি দিয়ে হামলাকারীরা তাঁর লোকজনকে মারধর করেছে।
জেলা জাতীয় পার্টির পূর্ব নির্ধারিত সাংগঠনিক সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জাপা নেতা আলমগীর শিকদার, নাজমা রহমান এমপি, ইলিয়াছ আহমদ ও জেলা কমিটির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমানসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। উদ্ভূত পরিস্থিতির পর কয়েকজন নেতাকে ঘটনাস্থলে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তাঁরা মুক্ত হন।