পাবনা-৪ আসনে উপনির্বাচনে দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবকেই প্রার্থী করেছে বিএনপি।
সোমবার দলের মনোনয়ন বোর্ড ভার্চুয়াল বৈঠকে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার নেওয়ার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী ছিলেন হাবিব। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর কাছে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন।
সাবেক মন্ত্রী ডিলুর মৃত্যুতে ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত পাবনা-৪ আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর সেখানে ভোটগ্রহণ হবে।
পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবের পাশাপাশি শ্রমিক দল নেতা আহসান হাবিব উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
ফখরুল বলেন, “দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ড তথা স্থায়ী কমিটি পাবনা-৪ আসনে হাবিবুর রহমান হাবিবকে মনোনয়ন দিয়েছে।”
মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর হাবিব সাংবাদিকদের বলেন, “আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পাবনা-৪ আসনের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারুণ্যের অহংকার আমাদের কাণ্ডারি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দল বিএনপির প্রতীক ধানের শীষকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।”
এই নির্বাচনে কোনো প্রকার ‘কারচুপি-কারসাজি’ না করতেও সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।
ছাত্রলীগের এক সময়ের সভাপতি হাবিব পরে তার রাজনৈতিক ধারার বিপরীতে গিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন।
পাবনা-৪ আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে স্থানীয় নেতা নূরুজ্জামান বিশ্বাসকে।
পাবনা-৪ উপনির্বাচনে জাপার প্রার্থী রেজাউল
পাবনা জেলা সভাপতি হায়দার আলীকে বাদ দিয়ে রাজনীতিতে প্রায় নবাগত এই তরুণকে মনোনয়ন দেওয়ায় ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে দলটিতে।
পাবনা-৪ আসনে (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে সোমবার দুপুরে মনোনয়ন চূড়ান্ত করার কথা জানায় জাতীয় পার্টি।
দলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। পরে রেজাউল করিমকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টি মনোনয়ন বোর্ড সভাপতি জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
বোর্ডের সভায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও মনোনয়ন বোর্ড সদস্য এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মুজিবুল হক চুন্নুও উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠনের সাবেক সদস্য রেজাউল করিম এখন একটি টেক্সটাইল মিলে কর্মরত। তার বাবা আব্দুল মজিদ পাবনা জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য ছিলেন।
রেজাউল বলেন, “চাকরির কারণে আমি তেমন এলাকায় যেতে পারি না। তবে আমি জেলা জাতীয় পার্টির নিয়মিত সদস্য। তবে এখন যেহেতু দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, আমি নিয়মিত যাব। গণসংযোগ শুরু করব।”
পাবনা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হায়দার আলীই এই উপনির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন বলে জানান জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার।
দলের সাবেক এই মহাসচিব বলেন, “হায়দার সাহেবের অনেক অবদান ছিল দলের জন্য। তিনি এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন বোর্ডে তিনি আসতে পারেননি। পরে জেলা জাতীয় পার্টি থেকে নতুন এই ছেলেটার নাম আসে। পাবনা জেলার নেতারাই বলছেন, এই ছেলেটাকে মনোনয়ন দিলে ভালো হবে। আর্থসামাজিক অবস্থান থেকেও ছেলেটি ভালো।“
জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আনকোড়া মুখকে হুট করে মনোনয়ন দিয়ে বারবার তৃণমূলের নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতারা।
রেজাউল প্রসঙ্গে হাওলাদার বলেন, “আসলে সার্বিক পরিস্থিতি আলোচনা করে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিষদ আলোচনা হয়নি। দলের সিনিয়র নেতাদের সায় ছিল। চেয়ারম্যান সাহেব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর এটা তো জাতীয় নির্বাচন নয়, এটা উপনির্বাচন।
“তরুণ একজনকে মনোনয়ন দিলে প্রশ্ন উঠবে এটাই স্বাভাবিক। তবে যতটা শুনেছি, সেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তেমন শক্ত প্রার্থী নেই। নির্বাচনে জয় পরাজয়ের বিষয়টি তো আমরা আগে থেকে বলতে পারি না। এটা জনগণের হাতে। আশা করব, রেজাউল শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবে।”
আওয়ামী লীগের শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মৃত্যুতে পাবনা-৪ আসনে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর উপ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে।
আওয়ামী লীগ ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে এই আসনে প্রার্থী করেছে। বিএনপি প্রার্থী করেছে সাবেক ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান হাবিবকে।