পার্টি অফিসে বোমা রেখে সমাবেশের ঘোষণা বিএনপির সন্ত্রাসী পরিকল্পনারই প্রমাণ : তথ্যমন্ত্রী

image-70135-1670588201

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পার্টি অফিসে বোমা রেখে সমাবেশের ঘোষণা বিএনপির সন্ত্রাসী পরিকল্পনারই প্রমাণ।

তিনি বলেন, নয়াপল্টনে পার্টি অফিসের ভেতরে বোমা রেখে সামনের রাস্তায় সমাবেশের জন্য এতদিন গোঁ ধরে থেকে বিএনপি প্রমাণ করেছে যে, ঢাকায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়, সন্ত্রাসী কার্যকলাপই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।

মন্ত্রী আজ দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে গত বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষের পর বিএনপি অফিস থেকে ১৫টি তাজা বোমা, ২ লাখ পানির বোতল, ১৬০ বস্তা চাল, রান্না করা খিচুড়ি, হাঁড়ি-পাতিল এবং দুই লাখ নগদ টাকা উদ্ধারের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘দেশে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। বিশেষ করে পুলিশের ওপর যখন হামলা হয়, রাস্তাঘাট বন্ধ করে বেআইনিভাবে যখন সমাবেশ করা হয়, তখন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকার বাধ্য হয়েছে। আমরা গত দুই সপ্তাহ ধরে বারংবার বলেছি, আপনারা যাতে বড় সমাবেশ করতে পারেন সে জন্য সরকার সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করবে। কিন্তু না, তারা দেশে বিশৃঙ্খলা করার জন্য নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে। এটি তো সম্পূর্ণভাবে বেআইনী।’

শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সবাই করতে পারে এবং সরকার যদি সহায়তা না করতো, নিরাপত্তা বিধান না করতো, তাহলে বিএনপির পক্ষে কখনও দেশের নয়টি জায়গায় বড় সমাবেশ করা সম্ভব হতো না উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, দেশের সব কয়টি বিভাগীয় শহরে তারা সমাবেশ করেছে, সরকার তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে, সেখানে টুঁ শব্দটুকু হয়নি। যেখানে একটু হয়েছে, সেখানে তারা নিজেরা নিজেরা চেয়ার ছোঁড়াছুড়ি, মারামারি করেছে।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, আমরা বিরোধী দলে ছিলাম, তখন আমাদেরকে সমাবেশ করতে দেওয়া হতো না।’ তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাদের নেত্রীকে হত্যার অপচেষ্টাসহ ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা ও প্রায় পাঁচশ’ নেতা-কর্মীকে আহত করা হয়েছিল। শেখ হেলাল এমপির জনসভায় হামলা চালিয়ে এক ডজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, কিবরিয়া সাহেব এবং আহসান উল্লাহ মাস্টারের জনসভায় হামলা চালিয়ে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যাসহ শতশত মানুষকে আহত করা হয়েছিল। অথচ ১৪ বছর যাবৎ আমরা ক্ষমতায়, তারা নির্বিঘেœ সমাবেশ করেছে।’

মির্জা ফখরুল-মির্জা আব্বাসের গ্রেফতার প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস তারা সবাই ২০১৩-১৪-১৫ সালে পাঁচশ’ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, ৩ হাজার মানুষকে আগুনে দগ্ধ করা, সাড়ে তিন হাজার গাড়ি পোড়ানো, লঞ্চ-ট্রেন পোড়ানোর হুকুম দাতা হিসেবে আসামী। তারা আদালতকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে, হাজিরা পর্যন্ত দেয়নি। এদিকে, গত ৭ তারিখ নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলা করা হলো, বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে ১৫টি তাজা বোমা পাওয়া গেলো। চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ সারা দেশে গাড়িতে আগুন দেয়া এবং ভাঙচুর করা হয়েছে। এগুলোর হুকুম দাতাও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব ও মির্জা আব্বাস। তাদের নেতৃত্বে এগুলো হয়েছে। আর তাজা বোমা নিয়ে যখন কেউ পার্টি অফিসে বসে থাকে, তখন তারা সবাই তো অপরাধী, তারা তাজা বোমা নিয়ে কেন বসে ছিল? এ সব কারণে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে।’

লন্ডন থেকে তারেক রহমান বিশৃঙ্খলা ঘটাতে উস্কানি দিচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, বিশেষ করে যে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে- এটি তারেক রহমানের নির্দেশেই তারা করেছে। বিএনপির অনেক নেতারা শুরু থেকেই রাজি ছিল, এমন কি পুলিশের সাথে প্রথম দু’টো বৈঠকে বিএনপিই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের প্রস্তাব দিয়েছিল। তারেক রহমানের নির্দেশেই তারা বিগড়ে বসে। মিরপুরে পল্লবী, কালসী মাঠ, এজতেমার ময়দান, বাণিজ্য মেলার মাঠসহ চার-পাঁচটি বিকল্প প্রস্তাবও তারা উপেক্ষা করে।’

‘তারেক রহমান দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামী এবং খুন, চোরাচালান, মানিলন্ডারিংয়ের আসামী। একজন আসামীর নেতৃত্বে যখন দল পরিচালিত হয়, সেই দল অপরাধী-আসামী-সন্ত্রাসীর মতই আচরণ করবে, বিএনপিতে তাই ঘটছে’ বলেন হাছান মাহমুদ।

ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বার্তার প্রশ্নে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত ৭ তারিখের ঘটনা নিয়ে তদন্তের কথা বলেছেন। অবশ্যই তদন্ত হবে। পুলিশ তো বিএনপি অফিসে বোমা পেয়েছে। কারা বোমা রেখেছিল, কারা বোমা বানিয়েছিল, বানানোর টাকা কারা দিয়েছিল, পুলিশের উপর কিভাবে হামলা করেছিল। এগুলো তদন্তে বেরিয়ে আসবে, পুলিশের কোনো ভুল থাকলে সেটাও তদন্তে বেরিয়ে আসবে। সরকার শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নিশ্চিত করেছে। সে কারণেই বিএনপি সারা দেশে নয়টি বড় সমাবেশ করতে পেরেছে এবং ঢাকায়ও যাতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে পারে সে জন্য সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়াও বিকল্প চারটি প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু পার্টি অফিসে বোমা রাখা, পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল মারা, হামলা করা, বেআইনীভাবে রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করা এগুলো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ দিয়ে ড. হাছান বলেন, ‘সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলে হামলা করেছিল। সেটি যেমন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়, সেটার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে যেমন তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং করছে, মামলাও পরিচালিত হচ্ছে, এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও অভিযুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে, এখানেও ৭ তারিখের ঘটনা তার সাথে তুলনীয় যে, এটাও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ।’

এ সময় কিছু গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক ভূমিকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যমের দায়িত্ব হচ্ছে সমাজের চিত্র ফুটিয়ে তোলা। একপেশে সংবাদ পরিবেশন করা গণমাধ্যমের কাজ নয়। সেই ক্ষেত্রে গণমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যায়। কোনো গণমাধ্যমেরই রাজনীতি করা সমীচীন নয়। আমি আশা করবো যারা এগুলো করছেন তারা রাজনীতি করবেন না, গণমাধ্যম হিসেবেই কাজ করবেন। সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে তার মানে মানুষকে মিস-লিড করার অপচর্চা কোনোভাবেই সমীচীন নয়।’

Pin It