নাগরিকদের নতুন পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংসদীয় কমিটি।
মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
গত অগাস্ট মাসে ‘পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে দুর্নীতিবিরোধী প্রচার চালানো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি ফারুক খান বলেন, “প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট ইস্যু করতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে আমরা পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে ডেকেছিলাম। তারা বিলম্বের বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছে। আমরা প্রবাসীদের ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট ইস্যু করতে বলেছি।”
তিনি বলেন, “পাসপোর্ট ইস্যুতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়টিও এসেছিল। জাতীয় পরিচয়পত্রে যে কোনো ব্যক্তির নাম ঠিকানাসহ সব ধরনের তথ্য থাকে। তাহলে এখনও পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনীতা কী? এর কোনো দরকার আছে কি না সেটা নিয়ে কমিটি প্রশ্ন তুলেছে।”
২০১২ সালে জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম) পাসপোর্ট ইস্যুতে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল চেয়ে একটি নোটিশ দেন। এর আগে ২০১১ সালে পাসপোর্ট অধিদপ্তরও পুলিশ ভেরিভিকেশন বাতিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। তবে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) তাতে আপত্তি তোলে।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বৈঠকে পাসপোর্ট ইস্যুতে বিলম্বের কারণ নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট ইস্যু করতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে যথা সময়ে পাসপোর্ট ইস্যু করতে সক্ষম না হলে তার যথাযথ কারণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করা হয়।
ফারুক খান বলেন, পাসপোর্ট অধিদপ্তর কমিটিকে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী আগামী ডিসেম্বরে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। জানুয়ারি থেকেই ই-পাসপোর্ট দেওয়া শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে প্রধান কার্যালয়সহ ঢাকার তিনটি আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে। এরপর সারা দেশে ও পরে বিদেশ থেকেও ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে।
এদিকে পাসপোর্ট সেবার জন্য একটি অ্যাপ তৈরির পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, “আমরা একটি অ্যাপ চালুর পরামর্শ দিয়েছি। এখানে পাসপোর্টের সর্বশেষ অবস্থা থাকবে। পাসপোর্ট দিতে কেন দেরি হচ্ছে, কতটা সময় লাগবে তা সেখানে উল্লেখ থাকবে।”
চার দেশ সফরে যাচ্ছে সংসদীয় কমিটি
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সমর্থন আদায়ে আসিয়ান-এর চার দেশ সফরে যাচ্ছেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা। চলতি অক্টোবর মাসের শেষ দিকে সিঙ্গাপুর যাওয়ার মাধ্যমে এ সফর শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে তারা কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড যাবেন।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি ফারুক খান বলেন, “আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যেসব দেশের বাংলাদেশের প্রতি ‘সফট কর্নার’ রয়েছে, সেই দেশগুলো সফরে যাচ্ছি আমরা। তাদের বাস্তবতা বুঝিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করব।
“ওই দেশেগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, পার্লামেন্টের স্পিকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করব আমরা।”
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদান এবং ভারত সফরের উপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সংসদীয় কমিটি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।
কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, নাহিম রাজ্জাক ও কাজী নাবিল আহমেদ অংশ নেন।