আলোচনায় থাকার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিজেকে নিয়ে চটকদার সংবাদ প্রকাশ করিয়েছেন মুসা ওরফে ‘রাজাকার নুলা মুসা’। এমনই একটি প্রকাশিত সংবাদ কাল হয়ে দাঁড়ায় মুসা ও তার পরিবারের জন্য।
২০১৪ সালে ‘বিজনেস এশিয়া’ নামক একটি সাময়িকীতে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে মুসার সম্পদের খোঁজে তদন্তে নামে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক কার্যালয়ে ডাকা হয় তাকে। সেখানেও নারী দেহরক্ষী বেষ্টনীর মধ্যে গিয়ে আবারো আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন মুসা।
আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আর সবার মনোযোগ আকর্ষণে মরিয়া মুসা দুদকের জিজ্ঞাসাবাদেও দেন চটকদার তথ্য। ইউরোপের সুইস ব্যাংকে স্থগিত (ফ্রিজ) অবস্থায় নগদ ১২ বিলিয়ন ডলার (৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) এবং ব্যাংকের ভল্টে ৯০ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) আছে বলে দাবি করে বসেন তিনি। এই কাহিনী আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ‘টাকা ফেরত পেলে’ বাংলাদেশে পদ্মা সেতু বানিয়ে দেওয়ার ‘স্বপ্ন’ দেখান মুসা বিন শমসের। আর বাকি অর্থের পুরোটাই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার গল্পও শোনান তিনি।
তবে এই ফাঁকা স্টান্টবাজি কোনো উপকারে আসেনি মুসার। এত অর্থ সম্পদের স্বপক্ষে ন্যূনতম ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ভল্টের নম্বরটুকুও বলতে পারেননি তিনি। মিথ্যা তথ্য প্রদানের অভিযোগে তাই মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ঢাকার অদূরে সাভার এবং গাজীপুরে এক হাজার ২০০ বিঘা জমি থাকার কথাও দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে জানান একাত্তরে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা মুসা বিন শমসের। অথচ দুদকের তদন্তে এর কোনো কিছুরই সত্যতা পাওয়া যায়নি।
তৎকালীন দুদকের সাবেক কমিশনার (তদন্ত) সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর গণমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্য ছিল অনেকটা এরকম- সুইস ব্যাংকে তার যে অর্থ জব্দ সেগুলো কোথায় পেলেন, এদেশ থেকে পাচার হয়েছে কি না সেই সন্দেহ থেকেই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে আমরা কিছুই পাইনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সুইস ব্যাংকগুলোতে যোগাযোগ করেছি। তারা মুসার নামে কোন অ্যাকাউন্ট থাকার অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে। বাংলাদেশেও যে জমিগুলোর কথা তিনি বলছেন, সেগুলোরও কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।
নিজেকে বিশাল ধনী পরিচয় দেওয়া মুসা প্রতারণা করেছেন গাড়ি কেনা নিয়েও। একটি বিলাসবহুল গাড়ি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কিনে দীর্ঘদিন ব্যবহার করেন তিনি। পরে গাড়িটি উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। মামলা হয় এই অভিযোগেও। নিজেকে ধনী ব্যবসায়ী পরিচয় দেওয়া মুসার এমন কর ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টিও সন্দেহে ফেলেন অনেককে।
এরপরেই আসে মুসা পুত্র ববি হাজ্জাজের কীর্তিকলাপ। ববির প্রথম শিকার হন সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। এরশাদের কিছু অর্থ সুইস ব্যাংকে আটকে আছে জানতে পেরেই ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে থাকেন ববি। এরশাদকে টোপ দেন, সেই টাকা উদ্ধার করতে সাহায্য করবেন বাবা মুসা। সেই টাকা জীবৎকালে এরশাদ দেখে যেতে না পারলেও জাতীয় পার্টিতে নিজের একটি জায়গা করে নিয়েছিলেন ববি হাজ্জাজ।
দলটির গঠনতন্ত্রে না থাকলেও এরশাদের ‘বিশেষ উপদেষ্টা’ হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। নিজের আখের গোছাতে এরশাদের টাকায় গড়ে তোলেন গবেষণা সেল। দলটির এক সিনিয়র নেতা বলেন, কীসের গবেষণা সেল? ওখানে কিছু কম্পিউটার রেখে সুন্দরী মেয়েদের আনাগোনা হতো শুধু। আর সুইস ব্যাংকের টাকা? সেই লোভ দেখিয়েই তো নেতার (এরশাদ) ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন। তিনি (ববি) একটা ফ্রড। আবার শিক্ষকতার মতো মহান পেশার ভং ধরেছেন।
এরশাদের সুযোগ করে দেওয়া পথ ধরে এখন রাজনীতি করছেন ববি হাজ্জাজ। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত থাকা বাবার আদম ব্যবসা, গালগপ্পো আর চাপাবাজি, কর ফাঁকি দেওয়া পরিবার এবং সরলতার সুযোগ নিয়ে বিনিময়ে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করা ব্যক্তিটি এখন রাজনীতির নামে প্রপাগান্ডা ছড়ানো নিয়ে ব্যস্ত।