লিবিয়ায় মানব পাচারের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে সিআইডি। মানবপাচারে জড়িত এখন পর্যন্ত ৩৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। আর গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির একজন পিয়নও রয়েছেন।
সেই পিয়নের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০-৩০ কোটি টাকা রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন সিআইডির তদন্তাকারীরা। সোমবার (৬জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি হেড কোয়ার্টার্সে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য দিয়েছেন সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান।
তিনি জানান, লিবিয়ায় মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত গডফাদাররা নজরদারিতে রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য দেশে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতদেরও নজরদারিতে রেখেছে সিআইডি।
সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন বিভাগের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘কুয়েতে মানবপাচারের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত সংসদ সদস্য মো. শহিদ ইসলাম পাপুলের বিষয়ে কুয়েতে তদন্ত চলছে। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা কাজ করছি।’
সংসদ সদস্য মো. শহিদ ইসলাম পাপুলের সম্পর্কে অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। এছাড়াও এটি আন্তর্জাতিক একটি ইস্যু হওয়ায় অনেক বিষয়ে বিবেচনা করেই কাজ করতে হচ্ছে। আশা করি খুব শিগগিরই এ বিষয়ে জানাতে পারব।’
সিআইডি প্রধান আরো বলেন, ‘মানবপাচারকারীদের বিষয়ে সরকারের দুটি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আমরা দুটি তালিকা পেয়েছি। এছাড়াও পাচার হওয়া ভূক্তভোগী, তাদের পরিবার ও বিভিন্ন দেশের অ্যাম্বাসি থেকে অনেক নাম পাওয়া গেছে। তাদেরও আমরা নজরদারিতে রেখেছি। মানবপাচারকারী যারা আটক হয়েছে তাদের কাছ থেকেও আমরা অনেক নাম পেয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এছাড়াও আমরা মানবপাচারকারী চক্রের গডফাদারদের বিষয়ে বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান করছি। তাদের গ্রেফতার করতে পারলে অবশ্যই সামনে নিয়ে আসব।’
তিনি বলেন, ‘মানি লন্ডারিংয়ের মামলার বিষয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। প্রথমে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান করতে হয় এরপর যে তথ্য পাওয়া যাবে তার ভিত্তিতে মামলা হয়। এবং সেই মামলার তদন্ত সিআইডি করে থাকে। এখন পর্যন্ত আমরা তিনজন ব্যক্তির বিষয়ে তদন্ত করছি। সিআইডির তদন্তকে আরো গতিশীল করার কাজ চলছে। আগে ষাট বা সত্তর শতাংশ ক্ষেত্রে মৌখিক স্বীকারোক্তির ওপর সিআইডি নির্ভর করতো, এখন ষাট থেকে সত্তর শতাংশ ফরেনসিক সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করার চেষ্টা চলছে। বিভাগটি ২২ ধরনের মামলা তদন্ত করে থাকে। ৮২ ভাগ ক্ষেত্রে তারা অভিযোগপত্র দিয়েছে, তবে সাজা হয়েছে ২৪ ভাগ ক্ষেত্রে।’
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কেন শাস্তির হার কম জানতে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। বিচারক, আইনজীবীদের নিয়ে গঠিত কমিটি মাসখানেকের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। আর লিবিয়ায় বাংলাদেশের ২৬ জন নিহত হয়েছেন। ১১ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় ২৬ টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে ১৫ টি মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ৬৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্য সিআইডি ৩৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।’