বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ‘ঠিকই আছে’ বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
চলমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ‘জরুরি বৈঠক’ শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “পুঁজিবাজার ঠিকই আছে, যে ওঠানামা হচ্ছে সেটা স্বাভাবিক।”
শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের একটি সংগঠন আন্দোলন চালালেও এ বিষয়ে সংবাদপত্রে আসা খবর প্রত্যাখ্যান করেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আপনারা তো পত্রিকায় লিখতেছেন যে পুঁজিবাজার নাই; বাংলাদেশ নাই। আমরা নাই- এরকম লেখালেখি শুরু করছেন। কোথায় সেরকম ঘটনা ঘটছে? মার্কেট কোথায় ফল করছে?
“সূচক ৫৯০০ হয়েছিল। এখন ৫৩০০ হয়েছে। পুঁজিবাজারে সূচক এরকম শর্ট টার্ম ওঠানামা করতে পারে।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মুস্তফা কামাল বলেন, “পুঁজিবাজারের বিষয়ে আপনারা যেভাবে লেখেন সেটা ঠিক না। ৫ হাজার ৯০০ থেকে সূচক যদি ৫ হাজার ৩০০ হয়, তাহলে কি কমে গেল বলেন? জাপানে তো ৩৯ হাজার থেকে সাত হাজারের আসছিল, আমেরিকাতে ১৭ হাজার থেকে সাত হাজার আসছিল।
“আবার ইন্ডিয়াতে ২১ হাজার থেকে সাত হাজারের আসছিল। এখন আবার তারা ২২-২৩ এ চলে গেছে। সব জায়গায় এরকম ঘটনা ঘটে।”
পুঁজিবাজারে অব্যাহত দর পতনের প্রতিবাদে ঢাকার মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে গত সপ্তাহে বিক্ষোভ করেছিল বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের পুঁজিবাজার এই মুহূর্তে ‘সঠিক জায়গায়’ আছে বলেই তিনি মনে করেন।
“আপনাদের যদি মনে হয় যে, পুঁজিবাজার সঠিক অবস্থায় নেই, তাহলে আপনারা স্টাডি করেন। দেখেন বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা, এ অবস্থায় পুঁজিবাজারের সূচক কত হতে পারে, বাজার মূলধন কত হতে পারে।
“আপনারা স্টাডি করেন, আমি মনে করি এই মুহূর্তে বাজার ঠিক জায়গাতেই আছে। এক সময় পিই ৮০-৯০ এ চলে গেছিল; এখন পিই আছে ২০ এর নিচে, ১৫ এর ঘরে। এটা খুব ভালো অবস্থা।”
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দীর্ঘদিন মন্দা দশার পর জাতীয় নির্বাচনের আগে ১৭ ডিসেম্বর থেকে বাজারের সূচক বাড়তে শুরু করে। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের পর বাজার চাঙ্গাভাবে ফিরে আসে। ২৪ জানুয়ারি ডিএসইএক্স বেড়ে ৫৯৫০ পয়েন্ট হয়।
কিন্তু ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক জানুয়ারি-জুন মেয়াদের মুদ্রানীতি ঘোষণার পর থেকেই বাজারে পতন শুরু হয়। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার (২১ এপ্রিল) ডিএসইএক্স ৫৩২৪ পয়েন্টে নেমে আসে।
এই তিন মাসে ঢাকার বাজারে সূচক কমেছে ৬২৬ পয়েন্ট বা ১০ দশমিক ৫২ শতাংশ।
লেনদেনও কমতে কমতে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে, যা জানুয়ারির শেষ দিকে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় উঠেছিল।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অন্য দেশের মত না। অন্য দেশে শিক্ষিত বিনিয়োগকারী বেশি। যারা বুঝেশুনে পুঁজিবাজারে আসে। কিন্তু আমাদের দেশে এই সংখ্যা খুবই কম। সে কারণে সূচকের সামান্য পতনেই তারা অস্থির হয়ে যায়।”
“কয়দিন পরপর পুঁজিবাজারে পতন হয়। এরইমধ্যে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে দুটি বড় ধস হয়েছে। এর পেছনে নিশ্চয় কেউ না কেউ আছে। এদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।”