ভারত সীমান্ত দিয়ে কিছু মানুষকে বাংলাদেশে ঢোকানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল; তবে এনিয়ে আতঙ্কিত না হতে বলেছেন তিনি।
ভারতের আসামে নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পর তাতে বাদপড়াদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানোর শঙ্কা তৈরি হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে।
আসামের নাগরিকপঞ্জি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ভাবনার কিছু নেই বলে বাংলাদেশ সরকারের তরফে বলা হলেও গত কিছু দিন ধরে ঝিনাইদহ সীমান্ত দিয়ে বেশ কিছু মানুষকে বাংলাদেশে ঢোকানো হচ্ছে। ঝিনাইদহের শুধু মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে আসা ২৩৮ জনকে গত নভেম্বর মাসে আটক করেছে বিজিবি।
বিভিন্ন সীমান্তের এমন ‘পুশব্যাক’ চেষ্টার বিষয়টি স্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “আমাদের বিজিবি কয়েক জায়গায় এদের ঢুকতে দেয়নি, অ্যালাও করেনি।
“বিগত দিনে বিভিন্ন সময়েও আমরা দেখেছি ৫ জন, ১০ জন কিংবা ২৫-৫০ জন করে তারা পুশইন (বাংলাদেশের ক্ষেত্রে) করানোর জন্য প্রচেষ্টা নিয়েছে। তখন দেখেছি, রোহিঙ্গাদেরকেও পুশইন করার একটা প্রচেষ্টা নিয়েছিল। রোহিঙ্গারা বিভিন্নভাবে ভারতের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে ভারতের ঢুকে গিয়েছিল। তারা বাংলাদেশে চলে আসতে চেয়েছিল, সেগুলো আমরা ঢুকতে দিইনি।”
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সংখ্যা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “এদের সংখ্যা হাজার হাজার নয়, কয়েকশ।”
বিষয়টি আতঙ্কের মনে করছেন কি না- প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা মোটেই আতঙ্কের বিষয় নয়। আমরা কোনোভাবেই বাংলাদেশি অধিবাসী ছাড়া কাউকে বাংলাদেশের মাটিতে ঢুকতে দেব না। আমাদের বিজিবিও সেজন্য সচেতন আছে।
“আমাদের সুনিশ্চিত হতে হবে যদি বাংলাদেশি নাগরিক হয়, তাহলে এগুলো আমরা রিসিভ করতে পারি। আর যদি বাংলাদেশি নাগরিক না হয়, তাহলে কোনোক্রমে গ্রহণ করব না।”
এ প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “আমাদের দেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে অনেকেই গিয়ে থাকেন। যখন ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তখন এদেরকে পাঠিয়ে দেয়। অনেকভাবেই ঘটনা ঘটে যায়। এরকম ঘটনা যদি কিছু হয়ে থাকে, তাহলে আমরা অবশ্যই রিসিভ করব।”
আগের চেয়ে তো পুশব্যাকের ঘটনা বাড়ছে- এক সাংবাদিক বললে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “হয়ত কিছু বেড়েছে, আমি সেটা অস্বীকার করছি না।
“তাদের রাজ্যে একটু কড়াকড়ি করেছে, সেজন্য হয়ত আমাদের যারা ইচ্ছা করে থেকে গেছেন কিংবা তারা ভিসার তোয়াক্কা করে নাই বা এ বিষয়ে চিন্তা করেন নাই; তারা হয়ত এরকমভাবে আন-অফিসিয়ালি আসার প্রচেষ্টা নিতে পারেন।
“কেউ শ্রমজীবী হিসাবে, কেউ পেশাদার হিসাবে যায়, কেউ অন্য কোনো সেবা যেমন- চিকিৎসা বা পড়াশোনা করার জন্য। তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়ে থাকলে হয়ত তাদের এই জটিলতা দেখা দিয়েছে। এরকম হতে পারে।”
‘পুশব্যাক’ নিয়ে এখনই ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার পক্ষপাতিও নন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “যদি হাজার হাজার বা শত শত হত, তাহলে একটা আলোচনার ব্যবস্থা হত। এগুলো অল্প কিছু সংখ্যক। ভারত সরকার তো আমাদের কাছে কোনো চিঠি দেয়নি, কোনো আবেদনও করেনি।
“যারাই গিয়েছিল, তারাই পালিয়ে আসছেন কি না কিংবা অবৈধভাবে গিয়ে অবৈধভাবে ফেরত আসছে কি না, সবকিছু আমাদের জানতে হবে। না বলে এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করবেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে অফিসিয়ালি কোনো আবেদন নিবেদন নেই।”
আইএস টুপিতে ‘অ্যালার্মিংয়ের কিছু নেই’
গুলশান হামলার আসামির আইএসের চিহ্ন সম্বলিত টুপি পরা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল।
বিষয়টাকে ‘অ্যালার্মিং’ মনে করছেন কি না- এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “কোনো অ্যালার্মিং নয়, একটা কাপড় … একটা টুপি মাথায় দিয়েছে। এটায় অ্যালার্মিংয়ের কী বিষয় আছে?
“এরা তো সবসময়ই বলছে, এরা ওই মতাদর্শী। আমরা সবসময় বলেছি, আমাদের দেশে এগুলো নেই। এগুলো সব হোমমেইড জঙ্গি। আরও ওরা ওখানে (আইএস) কানেক্টেড হতে চেয়েছে, এটা সবসময় বলেছে।”
ফাঁসির রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যানের মাথায় ছিল এই টুপি (ফাইল ছবি)
গত সপ্তাহে গুলশান হামলার মামলার রায়ের সময় ও পরে দণ্ডিত দুই আসামি পালা করে আইএসের চিহ্ন সম্বলিত একটি টুপি পরেছিলেন। ওই টুপি তারা কীভাবে পেলেন, তার উত্তর এখনও মেলেনি।
এই ঘটনা তদন্তে কারা কর্তৃপক্ষের তদন্তকারীরা বলেছেন, কারাগার থেকে ওই টুপি নিয়ে যায়নি আসামিরা। পুলিশের তদন্ত কমিটি এখনও প্রতিবেদন না দিলেও বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, আসামিরা কারাগার থেকেই ওই টুপি নিয়ে এসেছিলেন।
টুপির উৎস জানা গেছে কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কেউ না কেউ তো দিয়েছে। কে দিয়েছে, আমরা একটু জেনে নিই। কারণ বন্দিটাকে (আদালতে) নিয়ে গেছে যখন, তখন জনগণের ভেতর দিয়েই তো গেছে। কীভাবে পেয়েছে, সেটা আমাদের এখন একটু দেখার বিষয়। আমরা দেখে নিই। না দেখে এটার সম্পর্কে আমরা বলতে পারব না।”
তিনি একইসঙ্গে বলেন, “আমরা যেটুকু দেখেছি, কারাগার থেকে এমন কিছু আসেনি, সেটা কারা কর্তৃপক্ষ বলছে। পুলিশ বলছে, তারা এটা সাপ্লাই হতে দেখেনি। কাজেই কীভাবে আসল, তদন্তের বাইরে আমরা কিছু বলতে পারব না। আমরা পরবর্তী সময়ে জানিয়ে দেব, এটা কীভাবে পেয়েছিল।”
কারা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে তৃতীয় কোনো পক্ষকে দিয়ে আরেকটি তদন্ত করবেন কি না- প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “অবশ্যই হবে। বেরিয়ে আসবে, সবই আসবে।”