পূর্বাচলেই বাণিজ্যমেলা, এক্সিবিশন সেন্টার হস্তান্তর ৩১ ডিসেম্বর

1607857732.BG

অবশেষে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা যাচ্ছে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নামে স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্রে। এ লক্ষ্যে চলতি ডিসেম্বর ৩১ তারিখে বাণিজ্যমেলার স্থায়ী কেন্দ্রটি চীনের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর করবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে (ইপিবি)।

এদিকে গত কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যমেলা স্থায়ী কেন্দ্র পূর্বাচলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আসছিলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
২০২১ সাল থেকেই ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর পূর্বাচলে, এমনটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। সেলক্ষ্যে ৩১ ডিসেম্বর বাণিজ্যমেলার স্থায়ী কেন্দ্রটি চীনের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর করলে। আগামী ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সেখানে স্থায়ীভাবে ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হবে।

ইপিবির মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, পূর্বাচল উপশহর এলাকায় ২০ একর জমির ওপর বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নামে স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শেষে হয়েছে। চলতি ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখে চীনের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ইপিবির কাছে হস্তান্তর করবে।

তিনি বলেন, মূলত ব্যবসা-বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে এ মেলার আয়োজন করা হলেও সব শ্রেণীর মানুষের সমাগমে এটি পরিণত হয় মিলনমেলায়। বছর ধরে মানুষ এ মেলার অপেক্ষায় থাকে রাজধানীবাসী। এতদিন স্বল্প পরিসরে অস্থায়ীভাবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এ মেলার আয়োজন করা হতো। অপ্রতুল জায়গার কারণে স্থায়ী ভেন্যুর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পূর্বাচলে বিশাল পরিসরে কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যে টিকে থাকতে হলে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী নতুন পণ্য উৎপাদন এবং তা যথাযথভাবে প্রদর্শনে এ মেলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে বিশেষায়িত বাণিজ্যমেলা আয়োজন করার জন্য একটি স্থায়ী কেন্দ্র হবে। একইসঙ্গে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে। এই সেন্টার নির্মাণের মাধ্যমে স্থানীয় পণ্যের ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পটিটিভনেস’ বাড়বে। উন্নত হবে বাণিজ্যিক ও প্রাতিষ্ঠিনিক পরিবেশের। এতে দেশের বিনিয়োগ বাড়বে। পাশাপাশি জোরদার হবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাচলে স্থায়ীভাবে বাণিজ্যমেলা করার জন্য সরকারের কাছে ৩৮ একর জমি চেয়েছিল ইপিবি। তারমধ্যে মাত্র ২৬ একর জমি দেওয়া হয়েছে। আরো ১২ একর জমি শিগগির দেওয়া হবে। ২০ জমির ওপর এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ কাজ শেষ। আর ৬ একর জমিতে ওয়্যার হাউজ, পাওয়ার প্ল্যান্ট, স্থায়ী ফুড সেন্টার ও অংশগ্রহণকারীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থাসহ প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় সমাপনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, ‘আগারগাঁও থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা স্থায়ীভাবে পূর্বাচলে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেখানে বাণিজ্যমেলার নিজস্ব কমপ্লেক্স করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে বলেছেন, আগামী ২০২১ সালের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা হবে পূর্বাচলের নিজস্ব কমপ্লেক্সে। সেটা নতুন জায়গা। প্রথম দিকে একটু সমস্যা হবে। তবে সেখানে যাতে লোকজন যেতে পারে, সে বিষয়ে সবরকম ব্যবস্থা আমরা নেব। সেখানে আন্তর্জাতিক মানের একটা সেন্টার করা হয়েছে। আমরা সবরকমভাবে চেষ্টা করব, আগামী বছর শিফট করার জন্য’।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাচলে প্রায় ৭৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত ৩ বছর মেয়াদ পার হয়ে যায়, অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি। নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়। ব্যয় বাড়ানো হয় ১৭০ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে নেওয়া এ উদ্যোগটি বাস্তবায়নে সময় গিয়ে দাঁড়ায় ১২ বছরে।

সূত্র জানায়, চীনের অনুদান ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ এবং সরকারি তহবিলের ১৭০ কোটি ৩১ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়। পরে বাস্তবতার নিরিখে অতিরিক্ত ১৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ, নতুন স্থাপনা নির্মাণ, সেন্টারের পরিসর বৃদ্ধি, রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে ১৭০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সেসঙ্গে মেয়াদ ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।

Pin It