একটুও ব্যাট তোলা নয়, নেই উল্লাসের লেশ মাত্র। স্রেফ দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানের করমর্দনের আনুষ্ঠানিকতা। কে বলবে, এই জয়ে ফাইনালে উঠল দল! এতটাই অনায়াস, এতটাই প্রত্যাশিত ছিল বাংলাদেশের জয়। পাত্তা পেল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এক ম্যাচ বাকি রেখেই নিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের ফাইনাল।
ত্রিদেশীয় সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় জয়ে ফাইনালে উঠে গেছে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে ৮ উইকেটে জয়ের পর এবার বাংলাদেশের জয় ৫ উইকেটে।
ডাবলিনের মালাহাইড ক্রিকেট ক্লাবে সোমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৪৭ রানে আটকে রেখে বাংলাদেশ জিতেছে ১৬ বল বাকি রেখে।
জয়ের ব্যবধান আগের ম্যাচের মতো না হলেও জয়ের ধরন একইরকম। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সেভাবে দাঁড়াতেই দেয়নি বাংলাদেশ। কমতি রয়ে গেল স্রেফ রান তাড়ায়। আগের ম্যাচের মতো অতটা ‘ক্লিনিক্যাল’ হলো না ব্যাটিং।
এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই রান করতে পেরেছে শেই হোপ ও জেসন হোল্ডারের সৌজন্যে। বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা চতুর্থ সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে হোপ শেষ পর্যন্ত থেমেছেন ১৩ রান দূরে। দলের বিপর্যয়ে ফিফটি করেছেন হোল্ডার।
তবে আগের ম্যাচের মতোই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই দুজনকে ফিরিয়েছেন মাশরাফি। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ অধিনায়ক নিয়েছেন ৩ উইকেট। মাঝে আর শেষে মিলিয়ে মুস্তাফিজের শিকার ৪টি। একটি করে উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি সাকিব ও মিরাজ আটকে রেখেছিলেন প্রতিপক্ষকে।
সাইফ উদ্দিনের চোটে ওয়ানডে অভিষেকের সুযোগ পাওয়া আবু জায়েদ চৌধুরী অবশ্য নজর কাড়ার মতো কিছু করতে পারেননি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটায় ছিল ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত। সুনিল আমব্রিসের সৌজন্যে ৫ ওভারেই ক্যারিবিয়ানরা তুলেছিল ৩৫ রান।
মাশরাফির প্রথম ছোবল তখনই। স্লিপে সৌম্য সরকারের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন ১৯ বলে ২৩ রান করা আমব্রিস।
তিনে নামা ড্যারেন ব্রাভোর উইকেটও পেতে পারতেন মাশরাফি। কিন্তু সহজ ক্যাচটি নিতে পারেননি মিরাজ। সেটি অবশ্য দ্রুতই পুষিয়ে দেন এই অফ স্পিনার। নিজেই ফিরিয়ে দেন ব্রাভোকে।
পাওয়ার প্লের মধ্যে এসেও দারুণ বোলিং করেছেন মিরাজ। মিডল অর্ডারে জোড়া শিকার ধরেন মুস্তাফিজ। সাকিবের বোলিংয়ে রান করার পথই পাচ্ছিল না ক্যারিবিয়ানরা। ৯৯ রানে হারায় তারা ৪ উইকেট।
হোপ ও হোল্ডারের জুটি সেখান থেকে উদ্ধার করে দলকে। তাড়াহুড়ো না করে ধীর পায়ে এগিয়ে নেন দলকে। সময়ের সঙ্গে রানের গতিও বাড়ান দুজন। জুটির ১০০ আসে ১১৩ বলে।
একটি উইকেট যখন খুব প্রয়োজন বাংলাদেশের, আবার ত্রাতা হয়ে আসেন মাশরাফি। ফিরিয়ে দেন ১০৮ বলে ৮৭ রান করা হোপকে।
হোল্ডার ফিফটি স্পর্শ করেছিলেন ৫৭ বলে। পঞ্চাশের পর দারুণ একটি ছক্কা মারেন মাশরাফিকে। তবে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে থামান বাংলাদেশ অধিনায়ক। রাউন্ড দা উইকেটে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে ৬২ রানে বিদায় করেন হোল্ডারকে।
শেষ দিকে এক ওভারে দুটি উইকেট নেন মুস্তাফিজ। লোয়ার অর্ডারদের টুকটাক অবদানে ক্যারিবিয়ানরা যায় আড়াইশর কাছে।
গত ম্যাচে অনায়াসেই ২৬১ রান তাড়া করা বাংলাদেশের জন্য লক্ষ্যটা ছিল খুব নাগালেই!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ২৪৭/৯ (হোপ ৮৭, আমব্রিস ২৩, ব্রাভো ৬, চেইস ১৯, কার্টার ৩, হোল্ডার ৬২, অ্যালেন ৭, নার্স ১৪, রিফার ৭, রোচ ৩*, কটরেল ৮*; আবু জায়েদ ০/৫৬, মাশরাফি ৩/৬০, মিরাজ ১/৪১, মুস্তাফিজ ৪/৪৩, সাকিব ১/২৭, সৌম্য ০/১৫)
বাংলাদেশ: ৪৭.২ ওভারে ২৪৮/৫ (তামিম ২১, সৌম্য ৫৪, সাকিব ২৯, মুশফিক ৬৩, মিঠুন ৪৩, মাহমুদউল্লাহ ৩০*, সাব্বির ০*; রোচ ১/৪৬, কটরেল ০/৩৮, নার্স ৩/৫৩, চেইস ০/২৪, অ্যালেন ০/১১, হোল্ডার ১/৪৩, রিফার ০/৩১)