দেশে প্রথমবারের মতো স্বর্ণ করমেলার আয়োজন থেকে যে পরিমাণ অপ্রদর্শিত সোনা বৈধ হওয়ার আশা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা, তার অর্ধেকও আসেনি মেলায়।
লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের আরও সময় দিতে এনবিআরকে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
তারা বলছে, প্রথমবার হওয়ার কারণে এবং অর্থবছরের শেষে ব্যস্ততার কারণে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন।
নীতিমালা না থাকার কারণে এতদিন ধরে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা স্বর্ণের কোনো হিসাব ছিল না। গত বছর নীতিমালা প্রণয়নের পর অপ্রদর্শিত সোনা বৈধ করার লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে স্বর্ণ করমেলা আয়োজন করে এনবিআর।
তার আগে গত ২৮ মে অপ্রদর্শিত সোনা বৈধ করার সুযোগ দিতে এসআরও জারি করে এনবিআর। সে অনুযায়ী, চলতি ৩০ জুনের মধ্যে প্রতি ভরি স্বর্ণের জন্য এক হাজার টাকা, প্রতি ক্যারেট হীরার জন্য ৬ হাজার টাকা এবং প্রতি ভরি রুপার জন্য ৫০ টাকা কর দিয়ে অপ্রদর্শিত ধাতু ও রত্ন বৈধ করা যাবে।
মঙ্গলবার ঢাকা ও চট্টগ্রামে শেষ হওয়া তিন দিনের মেলায় এবং বিভাগীয় শহরগুলোতেও সোমবার শেষ হওয়া দুদিনের মেলায় তিনশ কোটি টাকার সোনা বৈধ হবে বলে বাজুস আশা করছিল।
কিন্তু এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেলায় সময় সারা দেশে স্বর্ণ বৈধ করা বাবদ আদায় হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা।
মেলা শেষ হলেও আগামী ৩০ জন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলে গিয়ে গচ্ছিত সোনা, হীরা ও রুপার ঘোষণা দেওয়ার সুযোগ ব্যবসায়ীদের রয়েছে। ওই সময়ের পর সেই সুযোগ আর থাকবে না বলে আগেই জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা মেলা শেষে বুধবার বলেন, জুয়েলারি সমিতি তিনশ কোটি টাকা আদায়ের যে আশা করেছিল, নানা কারণে তা পূরণ হয়নি।
“প্রথমবার হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। তাছাড়া সবারই জুন ক্লোজিংয়ের ব্যস্ততা।”
মেলার আগে তিনশ কোটি টাকার সোনার বৈধতার আশা করলেও পরে লক্ষ্যমাত্রা দুইশ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছিলেন বলে এখন জানাচ্ছেন তিনি।
ঢাকায় কর মেলায় ১১০ কোটি, চট্টগ্রামে ১০ কোটি, খুলনায় ৫ কোটি টাকাসহ সারাদেশে ১৪০ কোটি টাকার মতো আদায় হয়েছে মেলায়। মাসের বাকি কয়েকদিনে আদায়ের পরিমাণ দেড়শ কোটি টাকায় পৌছাবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বর্ণকর মেলার কর দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রত্যাশা পূরণ না হলেও ব্যবসায়ীদের সাড়া দেখে আশাবাদী আগরওয়ালা বলেন, “আশার কথা হচ্ছে, সব কর সার্কেলে কিছু কিছু টাকা জমা পড়ছে। এর মানে হচ্ছে ব্যবসায়ীরা বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নিয়েছেন এবং স্বর্ণ বৈধ করার এই উদ্যোগ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।”
দুইশ কোটি টাকার লক্ষ্য অর্জনে স্বল্প কর দিয়ে সোনা বৈধ করার এই সুবিধা নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর আহ্বান জানান বাজুস সাধারণ সম্পাদক।
“আমরা এনবিআর চেয়ারম্যানকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছি। নানা প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকেই স্বর্ণের কর দিতে পারেননি। তবে তাদেরও ইচ্ছে আছে, কর দিয়ে সোনা বৈধ করার। আগামী ৯০ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন দাখিলের সময় আছে। এই সময় পর্যন্ত যদি সুযোগটিও রাখা হয়, তাহলে দুইশ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া যাবে।”
স্বর্ণ বৈধ করার প্রচেষ্টায় বাজুস ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা’ করে যাচ্ছে দাবি করে আগরওয়ালা বলেন, “গণমাধ্যম ও অন্যান্য উপায়ে আমরা ব্যবসায়ীদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করছি। করমেলায় সারাদেশে অন্তত ৫ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে। যত বেশি স্বর্ণ বৈধ করা যাবে এই খাতটিও তত বড় হবে।”
প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে ভ্যাটের হার বেশি হওয়ায় তা স্বর্ণ ব্যবসার বিকাশে বাধা হিসেবে কাজ করছে বলে তুলে ধরেন তিনি।
“ভারতে স্বর্ণের উপর ভ্যাট ৩ শতাংশ, দুবাইতে ১ শতাংশ, আর বাংলাদেশে ভ্যাট ৫ শতাংশ। ফলে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ক্রেতারা বিদেশমুখী হন। এখন থেকে ভ্যাটের হারে সমন্বয়ের কথাটিও সরকারকে ভাবতে হবে।”
বাংলাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৭ হাজার স্বর্ণ ব্যবসায়ী রয়েছেন। কেবল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছেন প্রায় ১৪শ ব্যবসায়ী।