এসএসসি পরীক্ষা: প্রথম দিন অনুপস্থিত ১০ হাজার

w-5c55bad87feec

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনে দেশের অন্তত অর্ধশত কেন্দ্রে পুরনো প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজধানীতেও ঘটেছে এ ঘটনা। এতে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো অভিযোগ ছাড়াই শনিবার থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে বাংলা প্রথম পত্র এবং মাদ্রাসা বোর্ডে কুরআন মাজিদ পরীক্ষায় ১০ হাজার ৩৮৭ জন অনুপস্থিত ছিল। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিস্কৃত হয়েছে ২৪ শিক্ষার্থী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সকালে রাজধানীর খিলক্ষেতের কুর্মিটোলা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, পরীক্ষা শুরুর পর প্রথম ৩০ মিনিট এমসিকিউ প্রশ্নের পরীক্ষা নেওয়া হয়। লিখিত রচনামূলক পরীক্ষা শুরুর পর ২০১৮ সালের অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র তাদের মাঝে বিতরণ করা হয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ঘটনা ধরা পড়লে পরে প্রশ্নপত্র পরিবর্তন করে ২০১৯ সালের প্রশ্নপত্র তাদের সরবরাহ করা হয়।

এ বিষয়ে হল তত্ত্বাবধায়ক বিধান চন্দ্র রায় সমকালকে বলেন, ২০১৯ সালের বান্ডিলের ভেতরে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র পাঠিয়েছে। আমরা তা খেয়াল করিনি। পরীক্ষা শুরুর ১৫/২০ মিনিট পরই তা নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন পরিবর্তন করে সঠিকটিই দেওয়া হয়েছে।

তবে পরীক্ষার্থীদের দাবি, তাদের এক ঘণ্টা পর নতুন প্রশ্ন দেওয়া হয়। এই কেন্দ্রের মোট ২২১ জন গতকাল পরীক্ষা দেয়।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আবদুল খালেক বলেন, ভুলবশত ঘটনাটি ঘটেছে। বোর্ড থেকে এক প্যাকেটে দুই রকম প্রশ্ন পাঠানোয় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। পরে তা সংশোধন করা হয়েছে।

ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, লালমনিরহাট, ভোলা, সাতক্ষীরা ও গাইবান্ধায় একই ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাতটি কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান সমকালকে বলেন, ‘কেন্দ্র সচিবদের ভুলে সাত কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। ভুল করা সাত কেন্দ্র সচিবকে এরই মধ্যে আমরা শোকজ করেছি।’

এই সাতটি কেন্দ্র হলো চট্টগ্রাম নগরের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, গরীবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয় ও পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় এবং কপবাজরের পেকুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উখিয়া পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও উখিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

হাজার বছর আগের সিলেবাসে প্রশ্নপত্র!

বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার ‘খ’ ও ‘গ’ সেটের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্রের ওপরে লেখা ছিল ‘১০১৯ সালের সিলেবাস অনুযায়ী’। কিন্তু পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০১৯ সালের। এমন ভুলের কারণে পরীক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কৌতূহল- তাহলে কি এক হাজার বছর আগের সিলেবাসে প্রশ্নপত্র করা হয়েছে!

সারাদেশে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিন এমন ভুল ধরা পড়ে প্রশ্নপত্রে। এতে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টি হয়।

এ ব্যাপারে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির চেয়ারম্যান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেরও চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক সমকালকে বলেন, গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেসে মুদ্রণজনিত ত্রুটির কারণে ‘২০১৯’ সালের স্থলে ‘১০১৯’ ছাপা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে পরীক্ষার দিন তা কেন্দ্রে বিতরণের আগ পর্যন্ত কেউ মুদ্রিত প্রশ্নপত্র দেখার সুযোগ নেই। যে কারণে ওই ভুল থেকে গেছে। এটা সংশোধন করার সুযোগ হয়নি। ভবিষ্যতে কীভাবে এ ধরনের সমস্যা নিরসন করা যায়, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের।

অনুপস্থিত ও বহিষ্কার

কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, শনিবার অনুপস্থিতিতে শীর্ষে ছিল মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা। এ বোর্ডে অনুপস্থিত ছিল তিন হাজার ৭৮৮ জন আর বহিষ্কার হয়েছে ছয় পরীক্ষার্থী। এর পরই কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে অনুপস্থিত শিক্ষার্থী সংখ্যা এক হাজার ৬২১ জন, বহিস্কার ১৩জন।

ঢাকা বোর্ডে এক হাজার ৩৯৬, রাজশাহী বোর্ডে ৭৬২, কুমিল্লায় ৬৩১, যশোরে ৪৬৩, দিনাজপুরে ৫৪১, সিলেটে ৩১৮, বরিশালে ৩৯০, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৪৭৭ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। সাধারণ আটটি বোর্ডে পাঁচ শিক্ষার্থী বহিস্কার হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন বহিষ্কার হয়েছে বরিশাল বোর্ডে। এ ছাড়া ঢাকা ও দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে একজন করে বহিষ্কার হয়েছে। বাকি সব বোর্ডে কোনো শিক্ষার্থী বহিষ্কার হয়নি।

অন্যান্য বছরের মতো এবারও সকালের পরীক্ষা ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার মোট পরীক্ষার্থী ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৩। এর মধ্যে ছাত্র ১০ লাখ ৭০ হাজার ৪১১ এবং ছাত্রী ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯২ জন।

তৎপর দুর্বৃত্তরা

কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এবার পরীক্ষা শুরু হওয়ায় আগেভাগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে পরীক্ষা চলাকালেই বাংলা প্রথম পত্রের বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) প্রশ্ন এবং সৃজনশীল প্রশ্ন ফেসবুকে পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পরীক্ষা শেষে আসল প্রশ্নের সঙ্গে ফাঁস হওয়া বহুনির্বাচনী প্রশ্নের মিল না পাওয়া গেলেও সৃজনশীল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ফেসবুকের Ôssc all board question out 2019-v100%’ নামের একটি পেজে সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন পোস্ট করা হয়। এ পোস্টগুলো ছিল বেশ ঝাপসা।

অন্যদিকে সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে পরীক্ষাটির সৃজনশীল প্রশ্নের ৩নং সেটের প্রশ্ন পোস্ট করা হয়। বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সঙ্গে আসল প্রশ্নের মিল পাওয়া না গেলেও সৃজনশীল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

পরীক্ষা চলাকালে কীভাবে প্রশ্নপত্র ফেসবুকে এলো তা জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয় সাব-কমিটি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন, প্রশ্নফাঁস অথবা কোনো ধরনের প্রশ্ন ফেসবুকে পাওয়ার খবর তাদের কাছে নেই। ফেসবুকে প্রশ্ন পাওয়ার তথ্য জানালে তিনি বলেন, এবার এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কোনোভাবেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া সম্ভব নয়। পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্ন ফেসবুকে এলেও তা আসল নাকি নকল তা দেখতে হবে।

তবে তিনি বলেন, নিয়ম আছে কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার এক ঘণ্টা পর চাইলে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যেতে পারে। হয়তো এমনটিই হয়েছে। কোনো পরীক্ষার্থী এক ঘণ্টা কেন্দ্রে ছিল, পরীক্ষা দিয়েছে, বের হয়ে এসে সেই প্রশ্নের ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছে। কত রকম দুষ্টু চক্র আছে, সবাইকে তো ধরতে পারব না।

তিনি বলেন, তবে আজই হয়তো আমরা একটা নির্দেশনা দেব যে, কেউ ২ ঘণ্টা পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে যেতে চাইলে তাকে কেন্দ্রে প্রশ্ন জমা রেখে আসতে হবে।

Pin It