প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে। পাশাপাশি আটটি চুক্তি সই হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার কৌশলগত সম্পর্কের আলোকে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শেখ হাসিনা চীনের দালিয়ানে ২ জুলাই অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্রীষ্মকালীন সভায় অংশ নেবেন। ৪ জুলাই চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, ৫ জুলাই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চেয়ারম্যান লি ঝ্যাংসুর সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশের মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে। এক সময় যারা এটির বিরোধিতা করেছে তারা এখন আমাদের বক্তব্যের কাছাকাছি এসেছে। তারা এখন আমাদের পক্ষে কথা বলছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন বড় মাপের কূটনীতিক। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার একটি বিশেষ জায়গা রয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে, ৫ জুলাই তার সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী।’
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারকে চীন মদদ দিচ্ছে– এটা বিশ্বাস করি না। চীনের একটি অবস্থান আছে। তারা আমাদের সাহায্য করছে এবং আমাদের সমর্থন দিয়েছে। চীন বারবার বলেছে, রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফেরত যাক। চীন আরও বলেছে, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করুন। আমরা সেই পথেই আছি। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো ঝগড়া নেই।’
নিরাপত্তা পরিষদে চীনের ভেটোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।’ চীনকে কী বার্তা দেবে বাংলাদেশ জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা বলব তারা (রোহিঙ্গারা) মিয়ানমারের লোক এবং এই বিরাট জনগোষ্ঠী এখানে যদি অনেক দিন থাকে, তবে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হবে এবং গোটা অঞ্চলের উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন বা রাশিয়া এখন বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো কথা বলছে। এমনকি ভারতও।
চীন থেকে বেশি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের স্বার্থ রক্ষা করে কাজ করি। ঋণের ফাঁদের বিষয়ে অবগত আছি এবং ওই ফাঁদে যাতে না পড়তে হয়, সে বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ আছি। চীনের ঋণ সেই বিবেচনায় নিচ্ছি। উপকার হবে না এমন কোনো ঋণ কেউ জোর করে দিতে পারে না।’
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোডের (বিআরআই) বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থে কাজ করি এবং ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি অনুসরণ করি। সবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই। আমরা বেল্ট অ্যান্ড রোডে প্রথমেই যোগদান করেছি। এটাতে কোনো অসুবিধা হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ দিনের এই সফরে আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চুক্তিগুলো হলো– ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট, গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন এগ্রিমেন্ট, প্রেফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট লোন এগ্রিমেন্ট, পিজিসিবি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ গ্রিড নেটওয়ার্ক জোরদার প্রকল্পের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট, বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি, ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সমঝোতা স্মারক, ইয়ালু ঝাংবো ও ব্রহ্মপুত্র নদীর তথ্য বিনিময়-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক ও তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতা স্মারক। ১ জুলাই প্রধানন্ত্রী চীনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন।