প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অস্পষ্ট হতাশাজনক

Mirza-Fakhrul-Islam-Alamgir-676485552294b

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ‘অস্পষ্ট ও ‘হতাশাজনক’-এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনসংক্রান্ত বক্তব্য অস্পষ্ট। আমরা আশা করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টা একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচনি রোডম্যাপ দেবেন। সেটা তিনি দেননি। এটি আমাদের কিছুটা হতাশ করেছে এবং একই সঙ্গে জাতিকেও কিছুটা হতাশ করেছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন হয়ে গেছে। প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সেই ধরনের কোনো সমস্যা নেই। অতি দ্রুত সেটা করা সম্ভব।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা হয়। সেই সভার সিদ্ধান্ত জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সভায় অবিলম্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নির্বাচনের সময়ের ব্যাপারে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণ এবং তার প্রেস সচিবের বক্তব্যকে সাংঘর্ষিক বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ২৫ সালের শেষের দিকে অথবা ২৬ সালের প্রথম অংশে নির্বাচন হবে। এরপর তার প্রেস সচিব বলেছেন, ২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার (প্রেস সচিব) এ কথা সাংঘর্ষিক হয়ে গেছে। তাদের দেওয়া বক্তব্য কোনটা সঠিক, আমরা বুঝতে পারছি না।

স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সভায় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তী সময়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপদেষ্টার ভাষণের যে ব্যাখ্যা দেন, তা নিয়েও আলোচনা হয়। সভা মনে করে, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে নির্বাচনসংক্রান্ত বক্তব্য অস্পষ্ট। তার বক্তব্যে নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়ের কথা বলা হলেও নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখা হয়নি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের প্রথম অংশে অনুষ্ঠানের কথা বলেন, যা একেবারেই অস্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ নেই। অথচ তার প্রেস সচিব বলেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা পরস্পরবিরোধী। বিএনপির মহাসচিব বলেন, স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, এ ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আরও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়ে গেছে, সেহেতু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিলম্বের প্রয়োজন নেই। নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। জনগণ এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রত্যাশা করে। সভা মনে করে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা উচিত।

মির্জা ফখরুল বলেন, সভায় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে আমাদের বক্তব্য-ওই সংশোধনীতে ৫৫টি দফায় সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে প্রস্তাবনায় এবং তফশিলে ব্যাপক পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন ও বিয়োজন করার মধ্য দিয়ে সংবিধানকে একদলীয় শাসন ও রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের প্রধানতম হাতিয়ারে পরিণত করা হয়। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে গণতন্ত্রকে বেহাত করে দেওয়া হয়। আদালত উন্মুক্ত আদালতে রায়ের ঘোষণার সময় কিছু কিছু বিষয়ে মন্তব্য, পর্যবেক্ষণসহ ওই সংশোধনীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন এবং কিছু অংশ সংরক্ষণ করেছেন। অধিকাংশ আগামী সংসদের বিবেচনার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু রিট আবেদনকারী, সংযুক্ত হওয়া রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজন এবং দেশের আপামরসাধারণ আদালতের কাছে আরও বেশি কিছু সিদ্ধান্ত আশা করেছিল। রিট আবেদনকারীরা পুরো পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার প্রার্থনা করেছিলেন। বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিরা রিটের পক্ষে ইন্টেরভিনর হিসাবে যুক্ত হয়েছিলেন। আমরা এ রায়কে স্বাগত জানাই। আদালত স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, নির্বাচিত পরবর্তী সংসদই সংবিধান সংশোধনীর একমাত্র উপযুক্ত ফোরাম। সভায় অবিলম্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও এজেডএম জাহিদ হোসেন।

Pin It