যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তোলার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘সংগ্রাম’ এর কমিশনিং অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা কারও সাথে যুদ্ধ করতে চাই না, আমরা শান্তি চাই। আমরা শান্তি চাই এটা যেমন সত্য আবার যদি কেউ আমাদের উপর হামলা করে তা যেন আমরা যথাযথভাবে মোকাবেলা করতে পারি।তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান আমরা গড়ে তুলতে চাই।
“সে কারণেই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী- আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান যেন আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন হয়। আর এই সমুদ্রসীমা রক্ষার জন্য আমাদের নৌবাহিনীকে তো আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন এবং ইতিমধ্যে আমরা আধুনিক সরঞ্জামাদি ক্রয় করেছি, জাহাজ ক্রয় করেছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “খুলনা শিপইয়ার্ড আমি প্রথম নৌবাহিনীর হাতে দিয়ে দেই। পাশপাশি আমরা নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে দুটো ড্রাইডক নৌবাহিনীকে দিয়ে দিয়েছি। আমরা নিজেদের দেশেও স্বল্প পরিসরে ধীরে ধীরে জাহাজ বানানো শুরু করেছি, মেরামতের কাজও আমরা করছি আর বন্ধুপ্রতিম দেশের সাথে যৌথভাবে যেখানে যেটা প্রয়োজন আমরা করে যাচ্ছি।
“কিন্তু আমাদের নিজেদেরকেও শিখতে হবে, প্রস্তুত হতে হবে, জানতে হবে, টেকনোলজি জানতে হবে এবং আমরাও যেন আগামীতে জাহাজগুলো নিজেরা তৈরি করতে পারি এবং আমরাও প্রয়োজনে এক্সপোর্ট করতে পারি সেই চিন্তাটাও আমাদের মাথায় থাকতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমা। এই সমুদ্রসীমা নিয়েও সমস্যা ছিল আমাদের। যেটা জাতির পিতা সমাধান করবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, ১৯৭৫ এর পরবর্তীতে যারা সরকারে এসেছিল, আমি জানি না তারা এই বিষয়টা জানতই কিনা, কোনো উদ্যোগই নেয়নি।”
১৯৯৬ সালে সরকারে গঠনের পর এই ব্যাপারে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করাসহ কিছু কাজ করার কথা উল্লেখ করে দ্বিতীয়বার সরকারে এসে সমুদ্রসীমায় অধিকার অর্জনেন উদ্যোগ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
“আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে আমাদের দুই প্রতিবেশি দেশ, একদিকে মিয়ানমার, একদিকে ভারত- এই দুই প্রতিবেশি দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেও আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে আমরা আমাদের সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। এই সমুদ্রসীমা রক্ষা করা, সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগানো আমাদের অর্থনীতিতে, সমুদ্র সম্পদকে কিভাবে ব্যবহার করব সেগুলো আমাদের প্রয়োজন,” বলেন শেখ হাসিনা।
দেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাস সঙ্কটের প্রভাবের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল খুব ভালোভাবেই। দারিদ্র্যসীমা যেটা ৪০ ভাগে ছিল সেটা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮.১ ভাগে উন্নীত করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বিশ্বব্যাপী এক অদৃশ্য অশুভ শক্তি করোনাভাইরাস, এই অদৃশ্য শক্তির আক্রমণে সমস্ত বিশ্ব স্থবির হয়ে গেছে।
“অর্থনীতি স্থবির, যাতায়াত স্থবির, সবকিছু স্থবির হয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ থেকে সবকিছুতেই একটা ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। এই অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে কেউ লড়াই করতে পারছে না। অতি শক্তিধর অস্ত্রধারী দেশ হোক বা অতি অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ হোক অথবা একেবারে দরিদ্র দেশ হোক, উন্নত বা স্বল্পোন্নত দেশ হোক, সকলেই এখন একই অবস্থায় পড়ে গেছে। আমরা চাই এই অবস্থা থেকে মুক্তি, সারবিশ্ব মুক্তি পাক আর আমরাও যেন মুক্তি পাই।”
নৌবাহিনীর সদস্যদের নিজেদের ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করারও আহ্বান জানান সরকার প্রধান।
অনুষ্ঠানে শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
“জাতির পিতা এই দেশটাকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে। আমাদের দুর্ভাগ্য তিনি তা সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর খুব সীমিত সম্পদ নিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। এমনকি আমাদের বন্ধুপ্রতিম ভারতের কাছ থেকে দুটি জাহাজ নিয়ে এসে তিনি নৌবাহিনীর প্রথম যাত্রা শুরু করেন।
“সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত একটি দেশে সেই সময় এই ধরনের উদ্যোগ নেয়াটাও ছিল খুব কঠিন কাজ। একটা স্বাধীন দেশে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী- এটা যে একটা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেটা তিনি উপলব্ধি করেই এই পদক্ষেপ নেন।”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের সকল স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় উল্লেখ তিনি বলেন, “দীর্ঘ ২১ বছর পর যখন সরকারে আসি তখন আমার উদ্যোগ ছিল কিভাবে আমাদের দেশের শুধু উন্নতিই নয়, আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক বিভিন্ন বহিনীগুলোকে আরো উন্নত করে গড়ে তুলব।
“কারণ পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে আমার বাবার কি স্বপ্ন ছিল সেটা প্রায়ই উনি গল্প করতেন, কাজেই আমি কিছুটা জানতাম। সেইভাবেই তার আদর্শ নিয়েই যাত্রা শুরু করি।”
সরকার গঠনের পর নৌবাহিনীকে আরো সুসজ্জিত ও সুসংগঠিত করতে নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে অনুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা নেয়া নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদেরও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
চট্টগ্রামে ইশা খাঁ নৌ জেটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আ ম ম ম আওরঙ্গজেব চৌধুরী জাহাজের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন আরিফুর রহমানের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন।
জাহাজটি আগামী ১৯ জুন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে লেবাননের উদ্দেশে যাত্রা করবে।