জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের (এপিডি) প্রধান পদে সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না প্রশাসনে কর্মরত বেশিরভাগ কর্মকর্তা। অনেকে এ ধরনের দায়িত্ব প্রদানে সংক্ষুব্ধ ও বিব্রত। এ সংক্রান্ত সংযুক্তি আদেশ নিয়ে গত কয়েকদিন থেকে সচিবালয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনেকে কাছে এমন মন্তব্য করেন।
এপিডি অনুবিভাগের প্রধান পদে কর্মরত অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুস সবুর মন্ডলকে ৫ সেপ্টেম্বর সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পদোন্নতির পর তিনি একই প্রজ্ঞাপনে নিয়োগ পান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেখানে যোগদান করতে পারেননি। একপর্যায়ে ১৪ সেপ্টেম্বর পৃথক প্রজ্ঞাপনে জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আলী হোসেনকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই প্রজ্ঞাপনে আব্দুস সবুর মন্ডলের পদায়নসংক্রান্ত পূর্বের আদেশটি বাতিল করে তাকে পূর্বের পদে অর্থাৎ এপিডি হিসাবে সংযুক্ত থেকে দায়িত্ব পালনের আদেশ জারি করা হয়।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এপিডি অনুবিভাগের প্রধান পদে সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত সবাইকে হতবাক করেছে। তারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। কয়েকজন সচিব ও সিনিয়র সচিব বলেন, এটা মোটেই ঠিক হয়নি। তাহলে সচিব পদের মর্যাদা কোথায় থাকল। কোনো সমস্যা থাকলে তাকে কিছুদিন ওএসডি কিংবা পরবর্তী পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত রাখা যেত। যতদূর জানি, তাকে তো শিগগির অন্য মন্ত্রণালয়ে পোস্টিং দেওয়া হবে। তাহলে ১ মাস ছুটিতে কিংবা পদায়নের বাইরে থাকলে কি এমন ক্ষতি হতো। এছাড়া অনেকে মনে করেন, সচিব পদের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আব্দুস সবুর মন্ডলকেও এভাবে এপিডি পদে দায়িত্ব পালনে অসম্মতি জানাতে হতো। অপরদিকে কোনো সচিব যে মন্ত্রণালয়ে যোগদান করতে পারবেন না, সেখানে পোস্টিং না দেওয়াই শ্রেয়। এমন দৃষ্টান্ত ইতঃপূর্বে খুব কম দেখা গেছে। প্রয়োজনে আগে থেকে আলাপ করে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বিষয়টি পাবলিকলি হওয়ার পর সচিব পদের আদেশ স্থগিত কিংবা বাতিল করা অসম্মানজনক। তাও আবার এপিডি থেকে সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে না চাইলেও পর্দার আড়ালে এমন আলোচনা সচিবালয়ের প্রতিটি দপ্তরে হচ্ছে।
প্রশাসনে প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিত কয়েকজন যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমরা খুবই মর্মাহত ও বিব্রত হয়েছি যখন দেখেছি নেমপ্লেটে লেখা হয়েছে ‘মো. আব্দুস সবুর মন্ডল, সচিব সংযুক্ত (এপিডি)’। কারণ এপিডি পদটি প্রশাসনে সবার কাছে খুবই মর্যাদাপূর্ণ একটি পদ। বর্তমানে পদটি অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার হলেও দীর্ঘ সময় ধরে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করেছেন। এক সময় উপসচিবও ছিলেন এ পদে। কিন্তু এ পদটি সব সময় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর মধ্যে অন্যতম। কারণ এখান থেকে প্রশাসনে কর্মরত ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির সার্বিক প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। যে কারণে সবচেয়ে ক্লিন ইমেজসম্পন্ন এবং অধিকতর দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তাকে এপিডি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার অনেক সময় পদটিতে দলীয় বিবেচনায় সরকারের গুডবুকে থাকা কর্মকর্তাদের পদায়ন করে এপিডি পদের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ রয়েছে।
সংক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা বলেন, এপিডি পদের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে নীতিনির্ধারক মহলের উচিত হবে অতিসত্বর একজন পেশাদার ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া। সচিব পদটি যেহেতু প্রশাসন ক্যাডারের শীর্ষ পদ। তাই তারা এভাবে এ পদের অবমাননা দেখতে চান না। একইসঙ্গে এপিডি পদে আসার জন্য যারা তদবিরে ব্যস্ত, তাদের মধ্য থেকে পদায়ন করা ভুল হবে। নিয়মানুযায়ী ১৫তম ব্যাচের অতিরিক্ত সচিবদের মধ্য থেকে এপিডি নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসংক্রান্ত প্রবল পারসেপশন রয়েছে তাদের কেউ নিয়োগ পেলে এ পদের মর্যাদা আরও বেশি ক্ষুণ্ন হবে। সাধারণ কর্মকর্তারা এপিডি পদে একজন ইমেজসম্পন্ন দক্ষ কর্মকর্তাকে দেখতে চান।