শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত দুটি ‘বড় চক্রের’ হোতাসহ ৪৬ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহে নয় জনকে গ্রেপ্তার করার পর ‘প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস ও ডিজিটাল ডিভাইসের’ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের ওই ৪৬ জনকে ধরা সম্ভব হয়।
মোল্যা নজরুল বলেন, এই চক্র ভেঙে দেওয়ায় আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় আর কেউ প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টা করার ‘ধৃষ্টতা’ দেখাবে না বলে তারা আশা করছেন।
“এই চক্রের সদস্যদের মধ্যে ছাত্র, শিক্ষক ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আছেন। তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়ে যারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরকম শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম আমাদের তদন্তে এসেছে।”
গত সপ্তাহে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা হলেন- জনতা ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান, অগ্রণী ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহায়মিনুল ইসলাম, তৃতীয় বর্ষের সাঈদুর রহমান ও দ্বিতীয় বর্ষের আব্দুর রহমান রমিজ, গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিমন হোসেন, ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী অসীম বিশ্বাস ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মোশাররফ হোসেন মুসা এবং ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান তাজুল।
মোল্যা নজরুল বলেন, এতদিন প্রশ্ন ফাঁস হত মূলত প্রেস থেকে। তারপর ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে তা ছড়ানো হত।
“প্রেস থেকে প্রশ্নে ফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড হলেন রাকিবুল হাসান এছামী। ডিজিটাল ডিভাইসে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মাস্টার অলিপ কুমার বিশ্বাস, ইব্রাহীমসহ ছয়জন। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন ফাঁসে ব্যবহৃত শত শত ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে।”
এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালের অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হল প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগে দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন শাহবাগ থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রের আরও ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
“সংঘবদ্ধ এই চক্রটি ২০১৫ সাল থেকে ২০১৬ সালে প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে সাভারের একটি বাসায় পরীক্ষার আগের রাতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পড়াতো।
“আরেকটি চক্র ভর্তি ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার কয়েক মিনিট আগে প্রশ্নের উত্তর কেন্দ্রে কেন্দ্রে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করত।”
মোল্যা নজরুল বলেন, “ডিজিটাল ডিভাইসে প্রশ্ন ফাঁসের মাস্টারমাইন্ড বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাসসহ ওই চক্রের অন্যদের আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।”
প্রশ্ন ফাঁস করে এ চক্রের অনেকে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন জানিয়ে সিআইড কর্মকর্তা বলেন, “গ্রেপ্তার ইব্রাহীম, হাফিজ, মোস্তফা, তাজুল ও বাঁধন বিসিএসসহ সকল নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির হোতা। প্রাথমিক তদন্তে এই পাঁচজনের নামে ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে।”
এছাড়া জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা হাফিজের ব্যাংক হিসাব থেকে ১০ কোটি টাকার ‘অস্বাভাবিক’ লেনদেনের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরা-পশ্চিম থানায় মুদ্রা পাচার আইনে একটি মামলা করার কথা জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
মোল্যা নজরুল বলেন, “যারা প্রশ্ন ফাঁস করে সম্পত্তি অর্জন করেছেন সেই সম্পত্তি জব্দ করতে আমরা আদালতে আবেদন জানাব।”
সিআইডির প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শেখ হিমায়েত হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সবার ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় আমরা প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানোসহ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব।”
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের ডিআইজি শাহ আলমও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।