আয়ারল্যান্ডে আসার পর থেকে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে লড়ছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতি ম্যাচেও কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসে ধুঁকল দল। মাঠের ক্রিকেটে জমল না আইরিশদের সঙ্গে লড়াইও। শুধু বড় ব্যবধানের হারই নয়, প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিংয়ের কিছুই খুব ভালো হলো না বাংলাদেশের।
রোববার ডাবলিনের ক্লনটার্ফে যখন ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে খেলছে আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শহর থেকে বেশ দূরে হিলস ক্রিকেট ক্লাব মাঠে তখন আয়ারল্যান্ড ‘এ’ সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। ম্যাচে আইরিশদের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ৮৮ রানে।
আকাশে মেঘের আনাগোণা ছিল দিনভর। বাতাস ছিল কনকনে ঠাণ্ডা। উইকেট ছিল ঘাসে ভরা। তবে সেই উইকেট ব্যাটসম্যানদের পক্ষেই কথা বলেছে বেশি। মাঠও বেশ ছোট। আয়ারল্যান্ড উলভস নামে পরিচিত আইরিশদের ‘এ’ দল ৫০ ওভারে তুলেছিল ৩০৭ রান। মাঠ ও উইকেট বিবেচনায় রান তাড়া করার মতোই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২১৯ রানে।
এ ধরনের প্রস্তুতি ম্যাচগুলো সাধারণত অফিসিয়াল ম্যাচ হয় না। ব্যাটিংয়ের সময় ব্যাটসম্যানরা সবাই ব্যাট করার চেষ্টা করেন, বোলিংয়ের সময় বোলিং করেন সব বোলার। তবে এটি ছিল অফিসিয়াল লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ, তাই একাদশও নির্দিষ্ট। খেলেননি মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন, সাইফ উদ্দিন, আবু জায়েদ, নাঈম হাসান ও ইয়াসির আলি। নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
চোট পুরোপুরি কাটিয়ে ফেরার লড়াইয়ে থাকা রুবেল হোসেন এ দিনও শতভাগ দিয়ে বোলিং করেছেন বলে মনে হয়নি। উইকেট যদিও দুটি নিয়েছেন, ম্যাচের প্রথম ব্রেক থ্রুও তিনিই দিয়েছিলেন। তবে খুব স্বচ্ছন্দ মনে হয়নি বোলিংয়ে।
শেষ সময়ে আয়ারল্যান্ড সফরের দলে যোগ হওয়া তাসকিন আহমেদ ও ফরহাদ রেজা ছিলেন বেশ খরুচে। তাসকিন অবশ্য উইকেট নিয়েছেন তিনটি। তবে বোলিংয়ে গতি ও ধার ছিল না ততটা। ফরহাদ ছিলেন একদমই নির্বিষ।
আইরিশদের চিত্র ছিল উল্টো। ত্রিদেশীয় সিরিজের পরের ভাগের দল ঘোষণায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে এই ম্যাচের পারফরম্যান্স। সেখানে দারুণ এক সেঞ্চুরি করেছেন ওপেনার জেমস ম্যাককলাম। ৯১ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের পাশাপাশি ৪ উইকেট নিয়ে সিমি সিং জানিয়ে রেখেছেন দলে ফেরার দাবি।
আইরিশদের ইনিংসের ভিত ছিল ম্যাককলাম ও সিমি সিংয়ের ১২৪ রানের জুটি। শেষ দিকে টাইরন কেইনের ১৩ বলে ২৭ ও ক্রিস ইয়াংয়ের ৩ বলে ১২ রানে আইরিশরা পেরিয়ে যায় তিনশ।
রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা ছিল যথেষ্টই ভালো। তামিম ইকবাল ও লিটন দাস উদ্বোধনী জুটিতে তোলেন ৫৬ রান। এই দুজনের বিদায় দিয়েই দলের পথ হারানোর শুরু।
৩৩ বলে ২১ করে শেন গেটকেকের বল স্টাম্পে টেনে আনেন তামিম। পরের ওভোরেই লিটন বিদায় নেন ৩৯ বলে ২৬ রান করে।
সাকিব যতক্ষণ ছিলেন, তবু ছিল আশা। কিন্তু ৪৩ বলে ৫৪ করে এই ম্যাচের অধিনায়ক বিদায় নেন জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে। দারুণ কিছু শট খেলে মাহমুদউল্লাহ ৩৭ রানে বিদায় নেন সিমির বলে। বাংলাদেশের সব আশাও শেষ হয়ে যায়।
তবে এই আশার সমাপ্তি থেকেই নতুন আশার শুরু। মূল টুর্নামেন্টে হয়ত এই ম্যাচকে পেছনে ফেলতে পারবে বাংলাদেশ! মঙ্গলবারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু আসল লড়াই।
আয়ারল্যান্ড উলভস: ৫০ ওভারে ৩০৭/৮ (টেক্টর ১৫, ম্যাককলাম ১০২, শ্যানন ১৮, সিমি ৯১, টেক্টর ৮, গেটকেক ৯, ডোহেনি ১, রক ৯, কেইন ২৭*, ইয়াং ১২*; রুবেল ৯-০-৬৩-২, তাসকিন ১০-০-৬৬-৩, ফরহাদ ১০-০-৬৬-১, সাকিব ১০-১-৩০-১, মিরাজ ৬-০-৪৪-১, সাব্বির ৫-০-৩৫-০)।
বাংলাদেশ: ৪২.৪ ওভারে ২১৯ (তামিম ২১, লিটন ২৬, সাকিব ৫৪, মুশফিক ১১, মিঠুন ১৩, মাহমুদউল্লাহ ৩৭, সাব্বির ০, মিরাজ ৫, ফরহাদ ১৫, তাসকিন ১৪, রুবেল ২*; ইয়াং ৭.৪-০-৩০-১, কেইন ৯-২-৩৮-২, চেইস ৭-০-২৯-১, গেটকেক ৯-০-৫৭-১, সিমি ৯-০-৫১-৪, টেক্টর ১-০-৯-০)
ফল: আয়ারল্যান্ড উলভস ৮৮ রানে জয়ী