প্রথম টেস্টে শেষ দিনে যেভাবে হেরে গেছে বাংলাদেশ, তাতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে ভাবনার অনেক কিছুই আছে। দ্বিতীয় টেস্টে অপেক্ষায় আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ। শুধু প্রতিপক্ষ নয়, প্রকৃতিও যে এখানে ছড়িয়ে রেখেছে হাওয়ার কাঁটা! বাংলাদেশের বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড বলছেন, পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে প্রবল বাতাসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে দলকে।
পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জেস পার্কে শুক্রবার শুরু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট। সেই ১৮৮৯ সালে এই মাঠেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে অভিজাত ক্রিকেটের জগতে অভিষেক হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। এই মাঠেই ১৮৯১ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক রাগবি আয়োজন করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
১৩৩ বছর পুরনো এই টেস্ট ভেন্যু সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য ডোনাল্ডের চেয়ে উপযুক্ত লোক কমই আছে। এই মাঠ যে ছিল তার ‘হ্যাপি হান্টিং গ্রাউন্ড!’
১৯৯২ সালের বক্সিং ডে টেস্টে এখানে প্রথমবার টেস্ট খেলেন ডোনাল্ড। সেবার ভারতকে বলতে গেলে একাই গুঁড়িয়ে দেন তিনি। মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, শচিন টেন্ডুলকার, সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, রবি শাস্ত্রী, মনোজ প্রভাকরকে নিয়ে গড়া ব্যাটিং লাইন আপ বিধ্বস্ত করেন তিনি গতি, বাউন্স আর সুইংয়ে। প্রথম ইনিংসে শিকার করেন ৫ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে ৭টি।
এর আগে ওয়ানডেতে গতির ঝড় তুললেও টেস্টে মূলত ওই ম্যাচ দিয়েই বিশ্ব ক্রিকেটে নাড়া দেন ডোনাল্ড। ক্রমে এটি হয়ে ওঠে তার প্রিয় বিচরণ ক্ষেত্র। এখানে নিয়মিতই ঝলসে উঠতেন ‘সাদা বিদ্যুৎ।’ ৭ টেস্টে এখানে ৪০ উইকেট তার। তিনি টেস্ট ক্রিকেট ছাড়ার ২০ বছর পরও যা এই মাঠের সর্বোচ্চ।
দীর্ঘদিন পর আবার তিনি ফিরেছেন প্রিয় সেই আঙিনায়। এবার ভিন্ন ভূমিকায়। এখন আর তিনি শিকারি নন, বরং শিকারি গড়ার কারিগর।
পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের আগে ডোনাল্ডের ‘ট্রেনিং’ পর্বের বড় একটি অংশ জুড়ে থাকছে বাতাসের সঙ্গে লড়াই। বিসিবির ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের বোলিং কোচ বললেন, এখানকার বাতাসে মানিয়ে নেওয়া হবে বড় চ্যালেঞ্জ।
“পোর্ট এলিজাবেথে একটি ব্যাপারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে, তা হচ্ছে বাতাস। সাড়ে ১২টা থেকে ২টার মধ্যে প্রবল বাতাস আসে এখানে। দল হিসেবে আমরা সেটি নিয়ে কথা বলেছি। উঁচু ক্যাচ নেওয়া এখানে সত্যিকারের স্কিলের ব্যাপার। বাঁক খাওয়ানো ক্যাচ, লম্বা ক্যাচিংয়ের অনুশীলন অনেক করতে হবে আমাদের। জানতে হবে, কোন পাশ থেকে বাতাস আসছে। বিকেলের শেষভাগে স্কোরবোর্ডের দিক থেকে ৪০-৪৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস আসে। এটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।”
“এই মাঠ অনেকটা উইন্ড টানেল-এর মতো, স্কোরবোর্ড থেকে মাঠের ভেতর দিয়ে। এই বাতাস আবার ঘুরতে থাকে। বোলারদের কখনও মনে হয় বাতাসের অনুকূলে বোলিং করছে, হুট করেই আবারও মনে হবে বাতাসের প্রতিকূলে। বাতাস ঘুরতেই থাকে।”
টেস্টের আগে অনুশীলনে ক্যাচিংয়ে জোর দেওয়ার কথা জানালেন ডোনাল্ড। আর বোলারদের প্রস্তুত থাকতে বললেন কঠিন পরীক্ষার জন্য।
“আজকে ফিল্ডিংয়ে অনেক মনোযোগ দিতে হবে আমাদের। উঁচু ক্যাচিংয়ে যেন সঠিক পজিশনে যাওয়া যায় দ্রুত। (ম্যাচে) কাউকে কঠিন কাজটি করতে হবে, বাতাসের সঙ্গে বোলিং করা। কাউকে বাতাসের সঙ্গে করতে হবে বোলিং, কাউকে বিরুদ্ধে। কাজটি তাই কঠিন হবে।”
বোলারদের পরীক্ষা শুধু বাতাসের জন্যই নয়, চ্যালেঞ্জ সাজিয়ে বসে থাকবে উইকেটও। ডোনাল্ড তাই বললেন, এখানে সাফল্যের জন্য বোলারদের তূনে থাকতে হবে অনেক অস্ত্র আর চেষ্টা করতে হবে নানা কিছু। এছাড়া এই মাঠের ঐতিহ্য গ্যালারির হুল্লোড়, বাদ্য-বাজনা আর দর্শকের প্রবল চিৎকার তো থাকবেই।
“অনেক দলের সঙ্গেই এখানে দারুণ সব স্মৃতি আছে আমার। এখানে উইকেট এমন যে ব্যাটসম্যান বা বোলার হিসেবে কখনই খেলা মুঠোয় নেওয়া যায় না, বাইরেও বেরিয়ে পড়ে না। সবসময়ই কিছু না কিছু হতেই থাকে। এটা এমন একটা মাঠ, যেখানে বোলার হিসেবে আমাদের খুব সৃষ্টিশীল হতে হবে। সময় যত গড়ায়, উইকেট ক্রমে নিষ্প্রাণ হয়ে উঠতে থাকে। ফাস্ট বোলিংয়ের দিক থেকে তাই কিছু না কিছু কৌশল থাকতে হবে। সাহসী হতে হবে এবং নানা কিছু চেষ্টা করতে হবে।”
“এটা এমন একটা মাঠ, এখানে থিতু হলে বড় শতরান করা যায়। তবে ডেল স্টেইন এখানে কয়েক বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দেখিয়েছিল, যখন বল রিভার্স সুইং করা শুরু করে, সৃষ্টিশীল হলে এখানে উইকেট নেওয়া যায়। বোলারদের জন্য কাজ কঠিন হবে। তবে এটা ঐতিহ্যবাহী একটি টেস্ট ভেন্যু। আমি সবসময়ই এখানে আসতে ভালোবাসি এবং এখানকার ব্যান্ড, দর্শকের সামনে খেলতে উপভোগ করেছি। এখানে হইচই অনেক হবে।”