বাঁচা-মরার ম্যাচে দায়িত্ব নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে পারলেন না কেউই। যা একটু লড়াই করলেন অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি। পাকিস্তানের দেওয়া বড় লক্ষ্য তাড়ায় তা যথেষ্ট হলো না। দক্ষিণ আফ্রিকাকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে জয়ের পথে ফিরল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
ব্যাটে-বলে নিজেদের মেলে ধরেছিল পাকিস্তান। ফিল্ডিং এ দিনও ভালো হয়নি, হাত থেকে ছুটেছে ছয়টি ক্যাচ। তবে এর সুবিধা কাজে লাগাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। লন্ডনের লর্ডসে রোববার ৪৯ রানে হেরে আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে প্রোটিয়ারা বিদায় নিল বিশ্বকাপ থেকে।
ভালো শুরু পাওয়া পাকিস্তানকে মাঝে টানেন বাবর আজম। শেষটায় ঝড়ো ব্যাটিংয়ে পথ দেখান হারিস সোহেল। তাদের ফিফটিতে ৭ উইকেটে ৩০৮ রান করে পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা পারেননি ভালো শুরুগুলো খুব একটা বড় করতে। অধিনায়কের ফিফটির পরও ৯ উইকেটে থামে ২৫৯ রানে।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানকে ভালো শুরু এনে দেন ফখর জামান ও ইমাম-উল-হক। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন দুই ওপেনার। পেস বোলাররা তাদের ভাবাতে পারছিল না একদমই। পঞ্চদশ ওভারে আক্রমণে এসে ৮১ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন ইমরান তাহির।
লেগ স্পিনারকে স্কুপ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ফখর। পরে তাহিরকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ইমাম। অ্যালান ডোনাল্ডকে (৩৮) পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট এখন এই লেগ স্পিনারের।
কিপার কুইন্টন ডি ককের ব্যর্থতায় মোহাম্মদ হাফিজের উইকেট পাননি তাহির। ২ রানে জীবন পাওয়া হাফিজ ফিরেন থিতু হয়ে, অনিয়মিত অফ স্পিনার এইডেন মারক্রামের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে।
শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলেছিলেন বাবর। দলে ফেরা হারিস ক্রিজে গিয়েই শট খেলতে শুরু করেন। দ্রুত জমে যায় তাদের জুটি। আন্দিলে ফেলুকোয়ায়োকে ওড়ানোর চেষ্টায় বাবর সীমানায় ধরা পড়লে ভাঙে ৮১ রানের জুটি। পাকিস্তানের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ৭ চারে করেন ৬৯ রান।
ইমাদ ওয়াসিমের সঙ্গে ৭১ রানের আরেকটি ভালো জুটিতে দলকে তিনশ রানের কাছে নিয়ে যান হারিস। শেষ ওভারে ফেরার আগে ৮৯ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসস্যান। তার ৫৯ বলের ইনিংস গড়া তিন ছক্কা ও নয় চারে।
বড় রান তাড়ায় শুরুতেই উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এলবিডব্লিউর রিভিউ নিয়ে হাশিম আমলাকে ফেরায় পাকিস্তান। পরের জুটিতে সাবধানী ছিলেন ডি কক, রানের চাকা সচল রেখেছিলেন দু প্লেসি।
ধীরে ধীরে শট খেলতে শুরু করেন ডি কক। বাড়তে থাকে রানের গতি। শাদাব খানকে ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় কিপার ব্যাটসম্যান সীমানায় ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ভাঙে ৮৭ রানের জুটি। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে দু প্লেসিকে কট বিহাইন্ড করে প্রোটিয়াদের বড় একটা ধাক্কা দেন মোহাম্মদ আমির। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ৫ চারে ফিরেন ৬৩ রান করে।
ওয়াহাব রিয়াজের এক ওভারে জীবন পেয়েছিলেন দুই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান রাসি ফন ডার ডাসেন ও ডেভিড মিলার। দুই জনের কেউই পারেননি সুযোগ কাজে লাগাতে। ফিরে যান ত্রিশের ঘরে গিয়ে। শেষের দিকে ৬ চারে অপরাজিত ৪৬ রানের ইনিংসে দলকে আড়াইশ রানে নিয়ে যান ফেলুকোয়ায়ো।
৪৬ রানে ৩ উইকেট নেন ওয়াহাব। লেগ স্পিনার শাদাব ৩ উইকেট নেন ৫০ রানে। ঝড়ো ৮৯ রানের ইনিংসে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন হারিস।
৬ ম্যাচে দ্বিতীয় জয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে উঠে এসেছে পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল। সাত ম্যাচে পঞ্চম হারের স্বাদ পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার পয়েন্ট ৩। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদের একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩০৮/৭ (ইমাম ৪৪, ফখর ৪৪, বাবর ৬৯, হাফিজ ২০, সোহেল ৮৯, ইমাদ ২৩, ওয়াহাব ৪, সরফরাজ ২*, শাদাব ১*; রাবাদা ১০-০-৬৫-০, এনগিডি ৯-০-৬৪-৩, মরিস ৯-০-৬১-০, ফেলুকোয়ায়ো ৮-০-৪৯-১, তাহির ১০-০-৪১-২, মারক্রাম ৪-০-২২-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ২৫৯/৯ (আমলা ২, ডি কক ৪৭, দু প্লেসি ৬৩, মারক্রাম ৭, ফন ডার ডাসেন ৩৬, মিলার ৩১, ফেলুকোয়ায়ো ৪৬*, মরিস ১৬, রাবাদা ৩, এনগিডি ১, তাহির ১*; হাফিজ ২-০-১১-০, আমির ১০-১-৪৯-২, আফ্রিদি ৮-০-৫৪-১, ওয়াসিম ১০-০-৪৮-০, ওয়াহাব ১০-০-৪৬-৩, শাদাব ১০-১-৫০-৩)
ফল: পাকিস্তান ৪৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: হারিস সোহেল