জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জাতীয় সংসদে সর্বসম্মত একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর উত্থাপিত এই প্রস্তাবে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপিসহ সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী সব ক‘টি দলের সদস্যরা সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দেন।
এরপর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে দিলে সর্বসম্মতভাবে তা পাস হয়।
প্রস্তাব উত্থাপন করে সাবের চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ এবং ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। এই সমস্যার জন্য মূলত দায়ী উন্নত বিশ্ব, কিন্তু তারা এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। নিজেদের দেওয়া ওয়াদাগুলোও উন্নত বিশ্ব রক্ষা করছে না।
তার প্রস্তাবে বলা হয়, “সংসদের অভিমত এই যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অস্তিত্বের সঙ্কট, উপর্যুপরি দুর্যোগের ভয়াবহ আঘাত এবং চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্যের অপূরণীয় ক্ষতি, খাদ্য নিরাপত্তাহীন আশঙ্কা, ক্রমবর্ধমান পানি সঙ্কট, মহাসাগরগুলোর উপর অভাবনীয় চাপ এবং সম্পদের অমিতচারী ব্যবহারের প্রেক্ষাপটে গ্রহজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হোক।”
২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন বৃদ্ধির হার শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনা, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা এবং দ্রুততম সময়ে স্বল্প কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তর নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে প্রস্তাবে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সীমিত ভূমিকা রেখেও সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর প্রতিশ্রুত আন্তর্জাতিক সহায়তা না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রস্তাবে বলা হয়, ঝুঁকিতে থাকা এই দেশগুলোকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে হবে, যাতে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে।
প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিজস্ব অর্থে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। এই অর্থে ৭১৮টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে; যারমধ্যে ৪৬৩ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে।
প্রবীণ রাজনীতিক তোফায়েল আহমেদ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষতির বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, আগে শত বছরে একটি বড় ঘূর্ণিঝড় হলেও এখন প্রায় প্রতি বছরে একটি ঝড় মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাড়ছে এমন ঝড়ের প্রাবল্য
সাবেরের প্রস্তাবটিকে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, “স্পিকারের পক্ষ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টে চিঠি পাঠানো হলে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পাবে।”
জাতীয় পার্টির রুস্তুম আলী ফরাজী আত্মসমালোচনার সুরে বলেন, “জলবায়ুর ক্ষতি এড়াতে আমাদের করণীয় যথাযথভাবে পালন করছি না। বনায়ন না করে আমরা বন ধ্বংস করছি। জলাভূমি বন্ধ করা হচ্ছে, অক্সিজেনের অভাব তৈরি হচ্ছে। ৫০ বছর পরে যে শিশুরা আসবে তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত করে যাচ্ছি।”
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, “পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য আমরাই দায়ী। পাহাড় ধ্বংস হচ্ছে; নদী ধ্বংস হচ্ছে।”
বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন,“ ফান্ডে বরাদ্দের অর্থ কোথায় ব্যবহার হচ্ছে? কতটুকু ভূমিকা রাখছে? কার্বণ নিঃসরণে সোচ্চার হওয়া উচিত। কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে আমরা আরও বেশি সচেতন হয়ে দেখিয়ে দিতে পারি সারবিশ্বকে যে আমরা সচেতন।”
সাবের চৌধুরী এই প্রস্তাব সংসদে উত্থাপনের আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এই পদক্ষেপ।
“আমরা সংসদে প্লানেটরি ইমার্জেন্সি মোশন প্রস্তাব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সংসদে এই প্রস্তাব গ্রহন হলে তা হবে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে প্রথম।”