বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসে উচ্চ মৃত্যুহার নিয়ে সরকারের যে সমালোচনা করেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, তার জবাব দিতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিবের গণিতজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বিশ্বজুড়ে মহামারী রূপ নিয়ে ১১ লাখের বেশি মানুষকে আক্রান্ত এবং প্রায় ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটানোর জন্য দায়ী কোভিড-১৯ রোগে বাংলাদেশে মৃত্যুহার বেশি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সরকারের সমালোচনা করে বলেছিলেন, সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ।
তিনি শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “নিঃসন্দেহে রোগ পরীক্ষার স্বল্পতাই এই হিমশীতল মৃত্যু হারের কারণ। প্রতি হাজারে দক্ষিণ কোরিয়া যেখানে টেস্ট করেছে ৬ জন সেখানে বাংলাদেশ প্রতি ১০ লক্ষে টেস্ট করেছে মাত্র ৬ জন- এটা উদাসীনতা না উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত, তা আমাদের বোধগম্য নয়।”
অর্থনীতির ছাত্র ফখরুলের ওই প্রশ্নের জবাব দিয়ে গিয়ে শনিবার ঢাকায় নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র কাদের বলেন, “মৃত্যুর হার নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে মন্তব্য করেছেন, সেটা থেকে প্রমাণিত হয় উনি গণিতের সাধারণ সূত্রই জানেন না। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম বলেই সেখানে মৃত্যুর হার বেশি হওয়াটা স্বাভাবিক।
“করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শনাক্ত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রতিদিন সারা দেশে কমপক্ষে ১০০০ এবং প্রতিটি উপজেলায় ২টি করে নমুনা পরীক্ষার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।”
“সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণ অন্য দেশের তুলনায় নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হওয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা ব্যথিত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে হয়ত তারা খুশি হতেন,” বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, “প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সৃষ্ট বৈশ্বিক সঙ্কটের এই সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো দায়িত্বশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যখন দায়িত্ব ও কাণ্ডজ্ঞানহীনভাবে বক্তব্য রাখেন, তখন জাতি হতাশ হয়। তার বক্তব্য আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থ হওয়া একজন দিশেহারা রাজনীতিকের অসংলগ্ন প্রলাপ ও ব্যর্থতার বেসামাল বহিঃপ্রকাশ।
“সারা বিশ্বে সকল মানুষ একযোগে যখন এই সংকট মোকাবেলায় এক প্লাটফর্মে দাঁড়িয়েছে, তখন অর্বাচীনের মতো মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের রাখা বক্তব্য জাতিকে বিভ্রান্ত করে। তাদের এই বালখিল্যতার কারণে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন।”
দেশের অর্থনীতির উপর করোনাভাইরাস মহামারীর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বিএনপি মহাসচিব ৮৭ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তারও সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন, তা আমাদের অর্থনীতির ঊর্ধ্বগামী সম্ভাবনার বিপরীত। এই ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য জনগণকে শুধু হতাশই করতে পারে।
“এডিবির এক অর্থনীতিবিদ যেখানে বলেছেন, এই সঙ্কটের মধ্যেও এশিয়ায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে সর্বোচ্চ হবে, সেখানে অর্থনীতির এই সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার এই প্রস্তাব সঙ্কটকে আরও ঘনীভূত করবে।”
সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার যে সব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার পক্ষে দাঁড়িয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, “এই সঙ্কট, আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও সম্ভাবনা বিচার-বিশ্লেষণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের কল্যাণে কর্মসূচি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে চলেছেন।
“জননেত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত পরিকল্পনায় সারা বিশ্ব যেখানে সম্ভাবনার নতুন সূর্যোদয় দেখে, সেখানে মির্জা ফখরুল ইসলামরা বরাবরে মতো মুখ ঘুরিয়ে রাখেন অন্ধকারের দিকে। জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত বিএনপি কখনই আলোর পথে আসতে চায় না।”
বিএনপি ভুল তথ্য উপস্থাপন করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “দুর্যোগের এই মূহুর্তে বিভেদ নয়-এটা তাদের বোধগম্য নয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এই সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জনগণকে সতর্ক, সচেতন ও দায়িত্বশীল করার কাজ করে চলেছে।
“বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার শুরু থেকেই একটি গাইডলাইন প্রস্তুত করে রেখেছে এবং এই ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতন ও দায়িত্বশীল জনগণকে প্রধান নিয়ামক ধরে সম্মিলিত প্রয়াস গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে।”