নয় বছর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেনকে হত্যার মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ ১০৪ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।
রাজশাহীর অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বৃহস্পতিবার মামলার অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি হয়।
শুনানি শেষে বিচারক এনায়েত কবির সরকার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ১০৪ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের নির্দেশ দেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর তারিখ বিকালে নির্ধারণ করা হতে পারে বলে পরে জানিয়েছেন মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শিরাজী শওকত সালেহীন।
তিনি বলেন, “এ মামলায় আসামি ছিলেন ১১০ জন। এরমধ্যে ছয়জন মারা গেছেন। ১০৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, ৪৪ জন পলাতক।
মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীসহ ৬০ জন আসামিকে শুনানিতে হাজির করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।
শুনানিতে হাজির করতে সাঈদীকে গত বুধবার গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে রাজশাহী কারাগারে আনা হয় বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল দখলকে কেন্দ্র করে জামায়াত সমর্থক ছাত্র শিবিরের ক্যাডাররা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়।
রাতভর হলে হলে শিবিরের তাণ্ডবের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল ছাত্রলীগের কর্মী গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেনকে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখা হয়। এছাড়াও ছাত্রলীগের চার নেতার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। ওই রাতে হামলায় আহত হন আরও ৪০ জন।
ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম শিবিরের ৩৫ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মতিহার থানায় ফারুক হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়।ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর ২০১২ সালের ২৮ জুলাই পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
এতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দুইজনেরই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে) , নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, রাজশাহী মহানগর আমির আতাউর রহমান, রাবি ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ, সেক্রেটারি মোবারক হোসেন, নবাব আব্দুল লতিফ হলের সভাপতি হাসমত আলী, শহীদ হবিবুর রহমান হলের সভাপতি রাইজুল ইসলাম, শিবিরকর্মী রুহুল আমিন ও বাপ্পীসহ ১১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
বৃহস্পতিবার শুনানির পর আসামিপক্ষের আইনজীবী রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমীর আবু সেলিম বলেন, মামলায় ৩৫ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। সঙ্গে অজ্ঞাত বলা হয়েছে আরও ১৫ থেকে ২০ জন। সে অনুযায়ী ৫৫ জন আসামি হয়। কিন্তু অভিযোগপত্রে ১১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিপত্য ছাড়া যাবে না বলে শিবিরের নেতাকর্মীদের হুকুম দিয়েছিল। তাই তাকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। বাকিরা হত্যার আসামি। অভিযোগ গঠনের শুনানিতে সাঈদী নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।”