বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং তার স্ত্রী মাহবুবা সুলতানার সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে. এম. ইমরুল কায়েশ গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত আদেশ দেন। তবে তা প্রকাশ পেয়েছে রোববার।
২০১৭ সালে ফালু ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ঢাকার রমনা মডেল থানায় করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুটি মামলায় সম্পদ জব্দের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ দুটি আদেশ দেন।
দুদকের তালিকায় উল্লেখ করা সম্পদগুলো যাতে বিক্রি ও হস্তান্তর না করা হয় সে জন্য আদেশের কপি সংশ্নিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার, সাব রেজিস্ট্রার ও রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে আদালত থেকে আদেশটি দেওয়া হলেও রোববার তা প্রকাশ পায়। ফালু ও তার স্ত্রী মাহবুবা সুলতানা আদেশে উল্লেখিত সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তর করতে পারবেন না। তবে সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন বাধা থাকবে না। ফালু বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন।
ফালুর কাছ থেকে জব্দ সম্পদ: জব্দ তালিকায় থাকা ফালুর সম্পদগুলো হলো- রাজধানীর উত্তরখানে দুই জায়গায় ৬৭ শতাংশ জমি, বড় মগবাজারের পাঁচ জায়গায় ৪৫ শতাংশ জমি, বঙ্গবন্ধু এভিউনিউয়ে দুইটি দোকান, কাকরাইলের দুই জায়গায় ১৮ শতাংশ জমি, বাউনিয়ায় সাড়ে ৮২ শতাংশ নিচু জমি, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় সাড়ে ছয় শতাংশ জমি ও দক্ষিণ শাহজাহানপুরে একটি ফ্ল্যাট। আদালতের আদেশে এসব জমির মূল্যও উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া ফালুর মালিকানাধীন ইন্টারন্যাশনাল টেলিভিশন চ্যানেল লিমিটেডের (এনটিভি) সাত কোটি ৩৩ লাখ ৬২ হাজার টাকার শেয়ার, রোজা অ্যাগ্রো লিমিটেডের চার কোটি টাকার শেয়ার, রোজা প্রোপার্টিজের নয় কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার, স্টার পোরসিলিন (প্রা:) লিমিটেডের ১৩ কোটি টাকার শেয়ার জব্দের তালিকায় রয়েছে।
ফালুর স্ত্রীর জব্দ সম্পদ: ফালুর স্ত্রীর জব্দ সম্পদগুলোর মধ্যে রয়েছে- গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এলাকায় এক কোটি ৯৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা মূল্যের ছয়তলা বাড়ি, ইন্টারন্যাশনাল টেলিভিশন চ্যানেল লিমিটেডে (এনটিভি) তিন কোটি ২৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার, রোজা অ্যাগ্রো লিমিটেডে দেড় কোটি টাকার শেয়ার ও এমএএইচ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এক কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার টাকার শেয়ার।
দুদক সূত্র জানায়, ফালুর বিরুদ্ধে ১৭ কোটি ৮৬ লাখ ৬৮ হাজার ৩৯৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২০১৭ সালের ১৫ মে রমনা থানায় মামলাটি করেছিলেন দুদকের উপ পরিচালক সৈয়দ আহমেদ। একই কর্মকর্তা বাদী হয়ে ফালুর স্ত্রী মিসেস মাহবুবা সুলতানার বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৭২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একই থানায় আলাদা মামলা করেছিলেন একই বছরের ১০ আগস্ট। এই দুটি মামলায় তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
উপ-পরিচালক সৈয়দ আহমেদ এ মামলা দুটির তদন্ত করছেন। তদন্ত পর্যায়ে তাদের সম্পদ জব্দ করার জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। আবেদনের সঙ্গে উভয়ের সম্পদের তালিকাও জমা দিয়েছিলেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত পর্যায়ে ফালু ও তার স্ত্রীর সম্পদ জব্দ করা হচ্ছে।
প্রায় ২২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ফালু ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে করা অন্য মামলার চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে গত ২১ জানুয়ারি। পরে তদন্ত কর্মকর্তা মামলার চার্জশিট আদালতে পেশ করেন।