মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় পড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজটির আহত পাইলট, কেবিন ক্রুসহ ১০ আরোহী দেশে ফিরেছেন। শুক্রবার রাতে পৌনে ১১টার দিকে বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে করে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এঁদের মধ্যে দুর্ঘটনাকবলিত বিমানের দুই পাইলট ও দুজন কেবিন ক্রু রয়েছেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সচিব মো. মহিবুল হক, অতিরিক্ত সচিব মোকাব্বির হোসেন, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিল আহতদের সঙ্গে কথা বলেন ও তাঁদের খোঁজ-খবর নেন।
আহতের মধ্যে ১ জন সিএম এইচ হাসপাতালে, ৩ জন অ্যাপোলো হাসপাতালে, ১ জন অন্য একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন। বাকিরা বাসায় ফিরে যাবেন।
আহত আরোহীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটের ইয়াঙ্গুন রওনা হয়। মিয়ানমার পৌঁছানোর পর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ফ্লাইটটির বাংলাদেশে উদ্দেশে রওনা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ প্রথম আলোকে বলেন, আহত আরোহীরা মিয়ানমারের দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তাঁদের সবাইকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিমানের কথা হয়েছে।
শাকিল মেরাজ বলেন, আহত আরোহীদের মধ্যে অনেকে মিয়ানমারের চাকরি ও ব্যবসা করেন। তাই যেসব যাত্রী ফিরে আসতে চেয়েছেন তাঁদেরই দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাতে বিমানের বিশেষ ফ্লাইটটি ঢাকায় ফিরে আসে।
বুধবার সন্ধ্যায় ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় পড়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজটি। দুর্ঘটনায় যাত্রীসহ ৩৩ আরোহীর সবাই প্রাণে বেঁচে যায়। এদের মধ্যে দুজন পাইলট ও দুজন কেবিন ক্রু ছিলেন। তবে সব আরোহীই কম-বেশি আহত হন। আহতদের মধ্যে ১৯ জনকে ইয়াঙ্গুনের নর্থ ওক্কালাপা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৯ যাত্রীর মধ্যে ১৫ জন বাংলাদেশি, পাঁচজন চীনা, তিনজন মিয়ানমার, দুজন ব্রিটিশ নাগরিক। এ ছাড়া ডেনমার্ক, ফ্রান্স, কানাডা ও ভারতের একজন করে আরও চারজন যাত্রী ছিলেন।
রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়া উড়োজাহাজটির তিন টুকরা হয়ে গেছে। উড়োজাহাজটি আর আকাশে উড়তে পারবে না। বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারহাত হাসান জামিল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, উড়োজাহাজটি আর দেশে আনা সম্ভব হবে না।
বৈরী আবহাওয়ার কারণেই বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দুর্ঘটনার পরপর বিমানের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিমানের চিফ অব ফ্লাইট সেফটি ক্যাপ্টেন শোয়েব চৌধুরীকে।
বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটে ১০টি ফ্লাইট বাতিল
ইয়াঙ্গুনে ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ ছিটকে পড়ার ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট শিডিউলে বিপর্যয় ঘটেছে। উড়োজাহাজ সংকটের কারণে গত ৯ মে থেকে আগামী ১২ মে পর্যন্ত চার দিনে বিমানের ১০টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার ঢাকা-সৈয়দপুর, ঢাকা-রাজশাহী এবং ঢাকা-যশোর রুটের তিনটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। শুক্রবার ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে একটি এবং ঢাকা-সিলেট রুটে দুটি ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার ঢাকা-যশোর রুটে একটি এবং রোববার (১২ মে) ঢাকা-যশোর, ঢাকা-সৈয়দপুর ও ঢাকা-রাজশাহী রুটে তিনটি ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান।
বিমান বহরে বর্তমানে উড়োজাহাজ রয়েছে ১৩টি। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০, চারটি ৭৩৭-৮০০, দুটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, ও তিনটি ড্যাশ-৮ মডেলের উড়োজাহাজ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ও ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে বিমান। উপযুক্ত রানওয়ে থাকায় বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট চলাচল করে থাকে। তবে ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে সাতটি বিমানবন্দর ছাড়াও কলকাতা, কাঠমান্ডু ও ইয়াঙ্গুনে চলাচল করে। তিনটি ড্যাশ-৮ এর মধ্যে একটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় ফ্লাইট শিডিউলে বিপর্যয় ঘটে।
অবশ্য বিমান বহরে লিজে আনা হচ্ছে একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ। তাই ১৩ মে থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট শিডিউল স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছে বিমান কর্তৃপক্ষ। বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ প্রথম আলোকে বলেন, বিমানের পঞ্চম বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি কুয়েতের আলাফকো অ্যাভিয়েশন লিজ অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির কাছ থেকে ছয় বছরের জন্য লিজে আনা হচ্ছে। নতুন বোয়িংটি দিয়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট রুটি ফ্লাইট পরিচালিত হবে। আর দুটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর ও বরিশাল রুটে চলবে। এ জন্য ১৩ মে থেকে ফ্লাইট পরিচালনায় কোনো সমস্যা হবে না।