গতকাল চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হারের ক্ষতটা দগদগে ঘা হয়ে আছে। সেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার সুযোগ ছিল ফুটবলে। কিন্তু কিসের কি! উল্টো তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে ১-০ গোলে হেরে আফগানিস্তানের কাছে টানা দুই দিন হারের স্বাদ পেতে হলো বাংলাদেশকে। যে পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে শুরু হলো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ও এশিয়ানকাপের যৌথ বাছাইপর্ব। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ১০ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কাতার।
বাংলাদেশের চেয়ে ৩৩ ধাপ এগিয়ে আছে আফগানিস্তান। র্যাঙ্কিংয়ের মতোই খেলোয়াড়দের যোগ্যতার মানদণ্ডে জামাল ভূঁইয়াদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল ফারশাদ নুররা। ওয়েবসাইটের তথ্য মতে ম্যাচের ৬৫ ভাগ বলের দখল ছিল আফগানদের। পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট ম্যাচের চেহারা। ইউরোপিয়ান লিগে খেলোয়াড় সমৃদ্ধ আফগানরা শারীরিক সক্ষমতা, গতি বা বলের নিয়ন্ত্রণ-সবকিছুতেই নিজেদের সেরা প্রমাণ করে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।
গোলরক্ষক আশরাফুল রানা বেশ কয়েকবার দেয়াল না হয়ে দাঁড়ালে পরাজয়ের ব্যবধানটা হতে পারত আরও বড়। উল্টো একটি বারের জন্যও আফগান গোলরক্ষকের পরীক্ষা নিতে পারেনি জামাল বাহিনী। বাংলাদেশ দলের নাম্বার নাইন নাবীব নেওয়াজ জীবনের পায়ে বল দেখা গিয়েছে হাতে গোনা কয়েকবার। ম্যাচের শেষ সময়ে গোল করার সহজ সুযোগটিও নষ্ট করেছেন তিনি। ইয়াসিন খানের ব্যাকহিল গোলমুখ থেকে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলেও প্লেসিংয়ের আগে পেছন থেকে ট্যাকল করে ফেলে দেওয়া হয় তাঁকে। পেনাল্টির জন্য বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা আওয়াজ তুললেও কর্ণপাত করেননি রেফারি। তবে রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে পেছন থেকে ট্যাকল করে ফেলে দেওয়া হয়েছে জীবনকে। তবে এতে বাংলাদেশের স্ট্রাইকারের ব্যর্থতা আড়াল করা যাচ্ছে না। কারণ গোলমুখে প্রথম স্পর্শেই বলটা জালে জড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল তাঁর।
আফগানদের ৪-৩-৩ ফরমেশনের বিপরীতে ৪-২-৩-১ ফরমেশনে বাংলাদেশের শুরুর ৫ মিনিট আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু এর পর থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আফগানদের পায়ে। বাংলাদেশ কোচ জেমি ডের জানাই ছিল আফগান তিন মিডফিল্ডার তাদের মেরুদণ্ড। তাদের ঠেকাতে জামাল ও সোহেল রানাকে নিয়ে ডাবল পিভট দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলিয়ে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন জেমি। কিন্তু নিজের নামের প্রতি জামাল ছায়া হয়ে থাকায় বাংলাদেশের মাঝমাঠটা ঠুঁটো জগন্নাথের মতো মনে হয়েছে। তাদের ব্যর্থতা কিছুটা হলেও আড়াল হয়েছে দুই উইংগার নিচে নেমে রক্ষণভাগ ছায়া দেওয়ায়।
আফগানরা কখনো ছোট ছোট পাসে আক্রমণে উঠেছে। আবার কখনো দুই উইংয়ে এরিয়াল থ্রুতে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ ভাঙার চেষ্টা করেছে তারা। ইয়াসিন খান, বাদশা, বিশ্বনাথদের জমাট রক্ষণের জন্য গোলমুখে এসে থামতে হয়েছে। কিন্তু রক্ষণ সামলে পুরো ম্যাচ তো আর পার পাওয়া যায় না। ২৭ মিনিটে ফ্রিকিক থেকে ফারশাদ নুরের গোলে এগিয়ে যায় আফগানিস্তান। এতে দায় এড়াতে পারবেন না বাংলাদেশের দুই সেন্টারব্যাক। তাদের দুজনের মাঝখান থেকেই হেড করে গোলটি করেন নুর। গোলরক্ষক রানা বলের নাগাল পেলেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেননি।
গোল হজমের পর খোলস ছেড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেছে সাদ, বিপলুরা। ব্যক্তিগতভাবে তেড়ে ফুঁড়ে যাওয়ার চেষ্টা ছিল, কিন্তু একবারের জন্যও পরীক্ষা নিতে পারেননি। নিজেদের অ্যাটাকিং থার্ডে বাংলাদেশের একমাত্র স্ট্রাইকার নাবীব নেওয়াজ জীবন ছিলেন খুবই সাদামাটা। সতীর্থদের কাছ থেকে পাওয়া বল নিজের দখলে না রাখতে পারাই রক্ষণভাগে ওপর উল্টো চাপ পড়ে বেশি। ৫৬ মিনিটে বিপলুর জায়গায় পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশের শেষ দুই ম্যাচের জয়ের নায়ক রবিউলকে। কিন্তু প্রতি ম্যাচে তো তো আর বদলি নেমে গোল এনে দিতে পারবেন না তিনি। শেষ বাঁশি বাজার আগে সুযোগ পেয়েছিলেন জীবন। কিন্তু কাজে লাগাতে না পারায় হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশ দল: আশরাফুল রানা, ইয়াসিন খান, টুটুল হোসেন বাদশা, বিশ্বনাথ ঘোষ, রহমত মিয়া, জামাল ভূঁইয়া, সোহেল রানা, বিপলু আহমেদ (রবিউল ইসলাম), সাদ উদ্দিন, মোহাম্মাদ ইব্রাহিম (সুফিল) ও নাবীব নেওয়াজ জীবন।