ফেডারেশন কাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস

federation-5e11efcf977e2

পূর্ব-পশ্চিম দুই গ্যালারিতে ক্লাবের পতাকা হাতে রহমতগঞ্জ সমর্থকরা। ৮৭ বছরের ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবার কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠা পুরান ঢাকার ক্লাবটির সামনে ছিল শিরোপা জয়ের হাতছানি। ইতিহাসের সাক্ষী হতে দলবেঁধে মাঠে এসেছিলেন রহমতগঞ্জের সমর্থকরা। পিছিয়ে পড়েও ম্যাচে দারুণভাবে প্রত্যাবর্তন করে তারা। কিন্তু এক ড্যানিয়েল কলিনড্রেসের কাছেই যে হার মানতে হয়েছে রহমতগঞ্জকে।

রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকার এ ফরোয়ার্ডের ঝলকে নতুন ইতিহাস গড়ল বসুন্ধরা কিংস। ফেডারেশন কাপ পেয়ে গেল নতুন চ্যাম্পিয়নকে। গড়া হয়নি রহমতগঞ্জের নতুন ইতিহাস। প্রতিবেশী ক্লাব ফরাশগঞ্জের পাশে নাম ওঠেনি সৈয়দ গোলাম জিলানীর।

রোববার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নতুন মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্টের ফাইনালে চমক দেখানো রহমতগঞ্জকে ১-২ গোলে হারিয়েছে কিংস। ট্রেবল জয়ের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল অস্কার ব্রুজোনের দল।

গত মৌসুমে এই ফেডারেশন কাপের ট্রফিই শোকেসে ওঠেনি বসুন্ধরার। আবাহনীর কাছে ফাইনালে হেরেছিল তারা। এবার পাখির চোখ করেছিল ফেডারেশন কাপের দিকে। ফাইনালে অপেক্ষাকৃত দুর্বল রহমতগঞ্জকে পাওয়ার পর অনেকেই কিংসের হাতে শিরোপা দেখেছিলেন। কিন্তু গোলাম জিলানীর কোচিংয়ে এই রহমতগঞ্জ যে অন্য একটি দল। গতবারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী ও মোহামেডানকে হারিয়েই তারা ওঠে ফাইনালের মঞ্চে। প্রতিপক্ষ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল বলেই রোববার পাঁচ ডিফেন্ডারকে নিয়ে দল সাজান কিংস কোচ ব্রুজোন। আক্রমণে ছিলেন কলিনড্রেস-মতিন মিয়া। দুই প্রান্ত থেকেই আক্রমণে ওঠেন কলিনড্রেস ও মতিন। সিলেটের ফরোয়ার্ড মতিনের গতিতে বারবার পরাভূত হন রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডাররা। সবার চেয়ে আলাদা ছিলেন কলিনড্রেসই। ম্যাচের ৭ মিনিটে তার নেওয়া কর্নারে গোলটা প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল বসুন্ধরা। নিকোলাস দেলমন্তের হেড গোললাইন থেকে ফেরান রহমতগঞ্জের সুহেল মিয়া। বসুন্ধরার আক্রমণগুলো যেমন বিপজ্জনক ছিল, তেমনি কাউন্টার অ্যাটাকে জিলানীর দলও ছিল দুর্দান্ত। কয়েকবারই তপু বর্মণ-বিশ্বনাথ ঘোষকে নিয়ে গড়া কিংসের শক্তিশালী ডিফেন্স লাইনকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন মমদো বাহ-সুহেল মিয়ারা। ১৫ মিনিটে নিশ্চিত গোল বঞ্চিত হয় ‘ডাইলপট্টি’ খ্যাত রহমতগঞ্জ। মমদো বাহর ডিফেন্সচেরা পাস বক্সের মধ্যে খুঁজে নেয় সুহেল মিয়াকে। তার সামনে ছিলেন শুধুই বসুন্ধরা গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। ডান পায়ের যে শট নেন সুহেল, তা জিকোর গায়ে লেগে ফিরে আসে। চার মিনিট পর পোস্টের বাইরে শট মেরে আরেকটি সুযোগ নষ্ট করেন সুহেল মিয়া।

দুটি সুযোগ পেয়ে রহমতগঞ্জ পারেনি গোল করতে। আক্রমণের পসরা সাজানো কিংস ঠিকই আদায় করে নেয় গোল। ম্যাচের ৪১ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে বিশ্বনাথের উড়ন্ত ক্রস লাফিয়ে উঠে হেডের মাধ্যমে গোল করেন কলিনড্রেস। মেতে ওঠে কিংসের গ্যালারি। বিরতির পর সেই উচ্ছ্বাস মিইয়ে যায় রহমতগঞ্জ গোল করলে। ৬৪ মিনিটে শাহেদুল আলমের কর্নারে মমদো বাহর মাথা ছুঁয়ে বল জালে জড়ালে রহমতগঞ্জ গ্যালারিতে ওঠে গগনবিদারী আওয়াজ। বাদ্যযন্ত্র আর ভুভুজেলা বাজিয়ে উচ্ছ্বাস করতে থাকেন সমর্থকরা। কিন্তু ৭৬ মিনিটে গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটনের হাস্যকর এক ভুলেই সমতা ফেরানোর আনন্দ মাটি হয়ে যায় পুরান ঢাকার ক্লাবটির। কামারা ইয়ুনুসের ব্যাক পাসে বল পান লিটন। শট না মেরে কলিনড্রেসের সঙ্গে ড্রিবলিং করতে গিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ হারান তিনি। বল পেয়ে ঠান্ডা মাথায় গোল করে কিংসকে আবারও এগিয়ে নেন। আর এ গোলেই হয়ে যায় ম্যাচের মীমাংসা। গত বছর শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপ ঘোচানোর আনন্দ কিংস শিবিরে।

Pin It