জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা শারমিন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবারও দু’দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদ-উর-রহমান শুক্রবার এ আদেশ দেন।
তিন দিনের রিমান্ড শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ডা. সাবরিনাকে ডিবি পুলিশের মিন্টো রোডের কার্যালয় থেকে আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর ২টার দিকে তাকে এজলাসে তোলা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী আসামি সাবরিনার ৫ দিনের রিমান্ড চান। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুনানিতে আদালতে সারিনার আইনজীবী বলেন, ‘ওভাল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল হক চৌধুরীর বিভিন্ন অপকর্মের জন্য তাকে তালাক দিয়েছেন তার স্ত্রী কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন।’
শুক্রবার আবারও আদালতে হাজির করা হয় ডা. সাবরিনাকে- ছবি ফোকাস বাংলা
রিমান্ড শুনানির আগে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে, তা আমরা জানতে পারি না। রাষ্ট্রপক্ষ পেলেও কাগজ আমরা পাই না। এরপর বিচারক তাদের রিমান্ড ফরওয়াডিংয়ের কাগজ দেন।’
রাষ্ট্রপক্ষে সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা ফরিদ মিয়া বলেন, ‘ওভাল গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ার। তিনি (ডা. সাবরিনা) তার চেয়ারম্যান। জেকেজি গ্রুপের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়, তিনি সে মামলার আসামি। করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে আসামিরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে তা আত্মসাৎ করেছে জেকেজি। তার স্বামী আরিফুল হক জেকেজির মালিক। প্রতিষ্ঠান থেকে জাল সনদ দিয়ে তারা বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছেন। তাই তদন্তের স্বার্থে ডা. সাবরিনার ফের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।’
সহকারী পাবলিক পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান (হিরণ) বলেন, ‘আসামি একজন ডাক্তার। তার কাজ ছিল মানুষের সেবা করা। তিনি সেটি না করে মানুষের জীবন বিপন্ন করেছেন। তার কারণে মানুষ ডাক্তারদের ঘৃণার চোখে দেখে। তার আচরণ খুনির মতো। সাবরিনা ও সাহেদ একই সূত্রে গাঁথা। তাদের কর্মকাণ্ডে দেশের মানুষ বিব্রত।’
এ সময় আসামিপক্ষে সাইফুজ্জামান, ওবায়দুল হাসান বাচ্চু, আবদুস সালাম প্রমুখ আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে ডা. সাবরিনার দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সম্প্রতি জেকেজি’র ব্যাপারে বিশদ তদন্ত করতে গিয়েই উঠে আসে ডা. সাবরিনা ও তার প্রতারক স্বামী আরিফ চৌধুরীর নাম। তদন্ত করে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে কোনো পরীক্ষা না করেই প্রতিষ্ঠানটি ১৫ হাজার ৪৬০ জনকে করোনার টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করেছে। গুলশানে তাদের অফিসের ১৫ তলার ফ্লোর থেকে একটি ল্যাপটপে এই মনগড়া করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদন তৈরি করে হাজার হাজার মানুষের মেইলে পাঠায় তারা।
শুক্রবার আবারও আদালতে হাজির করা হয় ডা. সাবরিনাকে- ছবি ফোকাস বাংলা
প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় থেকে জব্দ ল্যাপটপ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর করোনা টেস্ট জালিয়াতির এমন চমকপ্রদ তথ্য মেলে। এতে দেখা গেছে, টেস্টের জন্য জনপ্রতি নেওয়া হয় সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। বিদেশি নাগরিকদের কাছে জনপ্রতি একশ’ ডলার। এ হিসাবে করোনার টেস্ট বাণিজ্য করে জেকেজি হাতিয়ে নিয়েছে সাত কোটি ৭০ লাখ টাকা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত সাবরিনার হাত ধরেই করোনার স্যাম্পল কালেকশনের কাজটি ভাগিয়ে নেয় অনেকটা অখ্যাত জেকেজি নামে এই প্রতিষ্ঠান। প্রথমে তিতুমীর কলেজে মাঠে স্যাম্পল কালেকশন বুথ স্থাপনের অনুমতি মিললেও প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার অন্য এলাকা আর অনেক জেলা থেকেও নমুনা সংগ্রহ করছিলেন তারা।
গত ২৪ জুন জেকেজির গুলশান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে আরিফসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দু’দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। দু’জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জেকেজির কার্যালয় থেকে ল্যাপটপসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়। সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি ছিল জেকেজির। পরে ওই চুক্তি বাতিল করা হয়।
এ ঘটনায় গত ১২ জুলাই দুপুরে ডা. সাবরিনাকে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের পর বিকেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর ঘণ্টাখানেক পর তাকে বরখাস্তের অফিস আদেশ জারি করা হয়।
এরপর ১৩ জুলাই সকালে ডা. সাবরিনা চৌধুরীকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে চার দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।