নানা অনিশ্চয়তায় অমর একুশে বইমেলা পার করেছে ২৯তম দিন।
প্রতিবার বইমেলা ২৮ কিংবা ২৯ দিনে হলেও এবার প্রথমবারের মতো সেই সংখ্যা অতিক্রম করবে।
করোনার কারণে স্বল্প সময়ের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবারের বইমেলা শুরু করার কথা বলা হয়। তবে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল পরিস্থিতি সাপেক্ষে বাড়তে পারে মেলার সময়। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সবাই প্রত্যাশা করলেও মেলার পরিধি বাড়ায় বেজায় খুশি লেখক-প্রকাশকরা। তবে এবার সেই সময়ও ঘনিয়ে আসায় মেলায় বাজছে ভাঙনের সুর। আগামী ১৭ মার্চ পর্দা নামবে বইমেলার।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ স্টলেই পাঠকদের আনাগোনা। পছন্দের লেখকদের বই সংগ্রহের পাশাপাশি অটোগ্রাফ নিচ্ছেন তারা। মেলায় আগত সরকারি বাঙালি কলেজের শিক্ষার্থী কাব্য হাসান বাংলানিউজকে বলেন, পুরো বছর এই একটি মাসের জন্য অপেক্ষা করি। লেখক-পাঠকের সঙ্গে দেখা মেলে। এবার অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত মেলা ভালোভাবে হওয়ায় আমরা পাঠকরা খুশি। পরিধি বাড়ায় ধুলোও কমেছে।
ভাষাচিত্র প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আল আমিন বলেন, মেলা যেমন শেষ দিকে, তেমনি বিক্রিও ভালো হচ্ছে। পাঠকরা তাদের পছন্দের বই কিনছেন। আর মাত্র দুইদিন হাতে থাকায় মেলায় ভাঙনের সুর বেজে ওঠেছে। অবিক্রিত বইগুলো আমরা নিয়ে যাবো।
অমর একুশে বইমেলার ২৯তম দিনে নতুন বই এসেছে ১২১টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ভাষাসংগ্রামী অজিত কুমার গুহ : জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাসান ইমাম মজুমদার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাফর ওয়াজেদ, মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন এবং রাজীব সরকার। সভাপতিত্ব করেন বেগম আকতার কামাল।
প্রাবন্ধিক বলেন, পূর্ববাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসে অবিস্মরণীয় নাম অজিত কুমার গুহ। শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে, মানবতার মূল্যবোধ ও সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আমৃত্যু লড়াই করে ইতিহাসে নিজের আসন সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। যে বিশেষণেই বিশেষিত করা হোক না কেন, তার অন্যতম প্রধান পরিচয় ভাষাসংগ্রামী অজিত কুমার গুহ। যেকোনো রাষ্ট্রীয়-সামাজিক বিপর্যয়ে ভাষা-আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী অধ্যাপক অজিত কুমার গুহর সাহসী অবস্থান লক্ষণীয়।
আলোচকরা বলেন, খুব তরুণ বয়স থেকেই অজিত কুমার গুহ’র মধ্যে স্বাধীনচেতা, অসাম্প্রদায়িক এক আদর্শ গড়ে উঠেছিল। নিজের মূল্যবোধ ও আদর্শ থেকে তিনি কখনো বিচ্যুত হননি। তিনি এমন একটি প্রজন্ম তৈরি করতে চেয়েছিলেন যারা দেশ, দেশের মানুষ এবং শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে ভালোবাসবে। নতুন প্রজন্মের সামনে অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ’র আলোকিত জীবন ও মূল্যবান রচনা তুলে ধরতে পারলে জাতি উপকৃত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বেগম আকতার কামাল বলেন, ছাত্রদের মধ্যে আদর্শ একটি জীবনচেতনা গড়ে তোলাই ছিল অজিত কুমার গুহ’র শিক্ষক জীবনের লক্ষ্য। অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই বিরল মানুষ বহু অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন। মানবতাবাদী, দেশপ্রেমী ও উদার মানসিকতার অধিকারী অজিত কুমার গুহ যে আদর্শ আমাদের সামনে রেখে গেছেন তা অনুসরণ করেই আগামীর পথে অগ্রসর হতে হবে।