প্রতিশোধ নিতেই রাজধানীর মগবাজারের দিলু রোডে বিয়ের আসরে কনের বাবা তুলা মিয়াকে (৫৫) ছুরিকাঘাতে খুন করে বখাটে সজীব আহমেদ রকি। হত্যার দায় স্বীকার করে সজীব শুক্রবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দিলু রোডের প্রিয়াঙ্কা শুটিং হাউসে ফাতেমা আক্তার স্বপ্নার বিয়ের অনুষ্ঠানে তার বাবা তুলা মিয়াকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে সজীব। এ সময় স্বপ্নার মা ফিরোজা বেগমও ছুরিকাঘাতে আহত হন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিয়েবাড়ির লোকজন ঘাতক সজীবকে ধরে পুলিশে দেয়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সুজন মিয়া বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সজীবের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার এসআই আবদুর রউফ বলেন, শুক্রবার সজীবকে আদালতে হাজির করা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। জবানবন্দিতে সজীব বলেছে, নিষেধ করার পরও স্বপ্নার বিয়ের ব্যবস্থা করেন তার বাবা-মা। এতে সে ক্ষুব্ধ ছিল। এ ছাড়া তুলা মিয়ার দায়ের করা নারী নির্যাতন মামলায় জেল খাটার কারণেও প্রতিশোধের নেশা চেপে বসে সজীবের মাথায়। সেই আক্রোশ থেকেই তুলা মিয়া ও ফিরোজাকে ছুরিকাঘাত করে সে।
সূত্র জানিয়েছে, স্বপ্নাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল সজীব। কিন্তু তাতে সাড়া পায়নি। পরে স্বপ্নাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে সে। স্বপ্নার পরিবারের কাছে একাধিকবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েও ব্যর্থ হয় বখাটে সজীব। দিলু রোডে স্বপ্নাদের বাসার কাছে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকত সে। সজীবের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েকে মিরপুরে খালার বাসায় পাঠিয়ে দেন বাবা তুলা মিয়া। সেখানে গিয়েও বখাটে সজীব তাকে উত্ত্যক্ত করত। একপর্যায়ে স্বপ্নাকে টাঙ্গাইলে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কয়েক মাস আগে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় আনা হলে আবার সজীব তার পিছু নেয়। এ ঘটনায় তুলা মিয়া সজীবের বিরুদ্ধে গত মার্চে নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় সজীব জেলও খেটেছে। পরে জামিনে বেরিয়ে আসে সে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের এক ছেলের সঙ্গে স্বপ্নার বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা আগেই জেনে যায় সে। বিয়ের আগের দিন বুধবার তুলা মিয়ার বাসায় গিয়ে তাকে ও তার স্ত্রী ফিরোজাকে হুমকি দিয়ে আসে।
শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে তুলা মিয়ার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে লাশ গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুরে নিয়ে যান স্বজনরা।