জেলা বিএনপির সভাপতিকে শোকজ এবং অপর দুই নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রতিবাদে তাদের অনুসারীরা বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়ায় দলের জেলা কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলুর নেতৃত্বে রাত পৌনে ১০টায় বিএনপি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পর তারা সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশ থেকে বগুড়ার সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী বগুড়া বিএনপির কমিটি পুনর্গঠনের জন্য জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের বৃহস্পতিবার ঢাকার নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডাকা হয়। দুপুর ১টার দিকে শুরু হওয়া ওই সভায় বগুড়ায় বিএনপির নব নির্বাচিত ও সাবেক সাংসদ এবং দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টারাও উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু।
সূত্র জানায়, ওই সভায় ৭ বছরেরও আগে ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি অনুমোদন পাওয়া মেয়াদোত্তীর্ণ বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বগুড়া জেলা বিএনপিতে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক হবেন না- এমন নেতাদের আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক করে আগামী দশ দিনের মধ্যে কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় সভায় গুঞ্জন ওঠে যে, বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান অথবা সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের মধ্যে যে কোন একজনকে আহবায়কের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তখন ওই সভায় উপস্থিত জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বক্তৃতা করেন। তার পর পরই জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পরিমল কুমার দাস এবং জেলা বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা সভাপতি শাহ্ মেহেদী হাসান হিমু দলের জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে দলের পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তারা এ সময় কমিটি পুনর্গঠনে ত্যাগী এবং নির্যাতিত নেতাদের মূল্যায়নেরও দাবি জানান। তবে তাদের এ ধরনের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। দুপুর ২টার দিকে সভা শেষ হলে বগুড়ার নেতৃবৃন্দ বিকেলে নিজ জেলার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
তবে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ বগুড়া পৌঁছার আগেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে জেলা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলামকে শোকজ এবং দলের জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক পরিমল কুমার দাস এবং প্রকাশনা সম্পাদক শাহ্ মেহেদী হাসান হিমুকে অব্যাহতি প্রদানের কথা ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই তিন নেতার অনুসারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। রাত পৌনে ১০টার দিকে তারা শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
ওই সমাবেশে স্বেচ্ছাসেবক দল বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলু বলেন, বিএনপির দুই ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা পরিমল কুসার দাস এবং শাহ্ মেহেদী হাসান হিমুকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তিনি সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে ‘ষড়যন্ত্রকারী’ উল্লেখ করে বলেন, ‘সংস্কারপন্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের ইন্ধনেই ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের দল থেকে সরিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। কিন্তু দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা কখনোই এ ধরনের সিদ্ধান্ত মেনে নিবে না।’
যোগাযোগ করা হলে বগুড়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে আসা জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি দলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোন চিঠি পাইনি।
বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের বগুড়া জেলা বিএনপি কার্যালয়ে তালা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এখন রাস্তায়। বগুড়ায় কি হচ্ছে সেটা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।