বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নতুন বই ‘আমার দেখা নয়াচীন’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। এটি তার লেখা তৃতীয় স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ।
রোববার বিকালে অমর একুশে বইমেলা-২০২০ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বইয়ের মোড়ক উন্মোচন শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৫২ সালে তরুণ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে পিকিংয়ে শান্তি সম্মেলনে যোগদান করেন। এরপর ১৯৫৪ সালে কারাগারে থাকাকালীন স্মৃতিনির্ভর নয়াচীন কাহিনি লেখেন তিনি। বইটিতে অসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ, নিজ দেশকে গড়ার সংগ্রামী প্রত্যয় ফুটে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারাগারে খাতা সেন্সর করে দেওয়া হতো। সেই সেন্সরের সিল থেকে আমরা জানতে পারি এটি ১৯৫৪ সালে লেখা। মলাটটি অনেকটা চীনা অক্ষরের মতো করে লেখা ছিল এবং মনোগ্রামটি পিকাসোর তৈরি করা।’
তিনি বলেন, ‘চীনে শান্তি সম্মলনে কীভাবে গিয়েছেন এবং তার পথ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা আছে বইটিতে। বিশেষভাবে লক্ষণীয়, এই বইতেই লেখা আছে- চীনে শান্তি সম্মেলনে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।’
সেই সময়ে চীনের অবস্থা কেমন ছিল বইতে সে বিষয়ে সবকিছুর উল্লেখ আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সেই সময়ে চীনের বিষয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন আজ বর্তমান চীনের অর্থনৈতিক অবস্থা ঠিক সেভাবেই পরিবর্তন হয়েছে। চীনকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিশ্লেষণ ছিল একদম নিখুঁত। এ সবকিছুই উল্লেখ আছে নতুন বইটিতে।
বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সঞ্চালক রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ইতোমধ্যে জাতি হাতে পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর লেখা দু’টি বই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’। আর ‘আমার দেখা নয়াচীন’ তার তৃতীয় স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ। বঙ্গবন্ধুকে লেখালেখিতে সবসময় উদ্বুদ্ধ করেছেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব।’
‘মুজিব’ সপ্তমখণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রথমে তার হাতে গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ সপ্তমখণ্ড তুলে দেন সিআরআই ট্রাস্টি ও বইটির প্রকাশক বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। এরপর সেখানে ড. আনিসুজ্জামান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীসহ উপস্থিত সবার হাতে এক সেট করে বই তুলে দেওয়া হয়।
সিআরআই সূত্র জানায়, শিশু-কিশোরদের জন্য তৈরি এই সপ্তমখণ্ডে তৎকালীন দুর্ভিক্ষের চিত্র উঠে এসেছে। এই বইটির সম্পাদনায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বইয়ে স্থান পাওয়া মানুষগুলোর অবয়ব পরিবর্তন করে রুগ্ন ও শীর্ণ করা হয়, যেমনটা দুর্ভিক্ষের সময় ছিল।
মোড়ক উন্মোচনের সময় অন্যদের মধ্যে সিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন শামস, বইটির সম্পাদক শিবু কুমার শীল, কার্টুনিস্ট সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময়সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বইটির প্রথম খণ্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খেলাধুলা, পড়াশোনা, ডাক্তারের কাছ থেকে পালানো, প্রথমবারের মতো কারাবরণের মতো বিভিন্ন কৌতূহলোদ্দীপক কাজের পাশাপাশি দেশের প্রতি কিশোর বয়স থেকেই তার বিশ্বাসের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানের চিত্র স্থান পেয়েছে।
দ্বিতীয় খণ্ডে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে হাতেখড়ির পাশাপাশি তার প্রেরণা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। তৃতীয় খণ্ডে বঙ্গবন্ধুর স্কুল ও কলেজ জীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষের সময় মানবিক ভূমিকা উঠে আসে। চতুর্থ খণ্ডে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ সম্মেলন শেষে তরুণ শেখ মুজিবের দিল্লির বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ও ১৯৪৪ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলনে তার ভূমিকার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
‘মুজিব-৫’ এ ১৯৪৫ সালে অত্যন্ত জনপ্রিয় হওয়া সত্যেও শেখ মুজিবুর রহমানকে কিভাবে ছাত্রলীগের পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ওই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের কালোবাজারি এবং দেশের কিছু এমএলএ ও খান বাহাদুরদের স্বার্থের টানাপোড়েনের কারণে ব্রিটিশ গভর্নরের কাছে ক্ষমতা চলে যাওয়ার কথা বর্ণনা করা হয়। এসবকিছু দারুণভাবে নাড়া দেয় তরুণ শেখ মুজিবকে। ‘মুজিব-৬’ খণ্ডে খাজা নাজিমুদ্দিনের নানা কূটকৌশলের বিপরীতে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান উঠে আসে।