বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য: আইনি ব্যবস্থা চায় ১৪ দল

1606923388.3

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া আইন ও সংবিধান পরিপন্থী বলে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামাজিক গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এই জোটের শরিক দলগুলোর নোতারা।

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে বিরোধিতা করে বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি ছাত্র, যুব, সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবাদে নেমেছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা এবং বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান ও তার অবদানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা বলে ওই সব দল-সংগঠনের নেতারা মনে করছেন।

শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আয়োজিত এক মাহফিলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর বক্তব্যের পর ওই সব দল ও সংগঠনের নেতারা ব্যাপক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।

জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, “আমি কোনো পার্টির নাম বলছি না, কোনো নেতার নাম বলছি না…। কেউ যদি আমার আব্বার ভাস্কর্য স্থাপন করে, সর্বপ্রথম আমি আমার আব্বার ভাস্কর্যকে ছিঁড়ে, টেনে-হিঁচড়ে ফেলে দেব। ”

এর আগে গত ১৩ নভেম্বর চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম ভাস্কর্য নির্মাণের স্থল ঢাকার ধোলাইপাড় এলাকায় এক সমাবেশে বলেন, “ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপনের চক্রান্ত তৌহিদি জনতা রুখে দেবে। রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে মূর্তি স্থাপনের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে ফিরে আসতে হবে। সরে না এলে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। ”

একই দিনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হক ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনেএক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর মূর্তি স্থাপন বঙ্গবন্ধুর আত্মার সঙ্গে গাদ্দারি করার শামিল। ”

গত ২৬ নভেম্বর হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী জামেয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসায় আলেমদের এক জরুরি সভায় প্রাণী বা মানবমূর্তি নির্মাণ বন্ধের দাবি জানান।

১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের সঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতি যুক্ত করে বিকর্ত সৃষ্টির মাধ্যমে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা হচ্ছে। এখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতার মধ্য দিয়ে তারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে নেমেছে।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা এ দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারার তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র বলে ১৪ দলের নেতারা মন্তব্য করেন। ওই নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ হেফাজতে ইসলাম ও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে সমঝোতা করে ছাড় দিয়েছে। এ কারণেই তারা আজ এমন হুংকার দিতে পারছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এ নিয়েও জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।

১৪ দলের নেতারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা ঔদ্ধত্যপূর্ণ। একইসঙ্গে গণতন্ত্র, আইন ও সংবিধানের লঙ্ঘন। এ ধরনের বক্তব্য যারা দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ও আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি মুক্তিদ্ধের চেতনার সকল অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

এ বিষয়ে ১৪ দলের অন্যমত শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা মানে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে প্রশ্ন বিদ্ধ করা, তাকে অসম্মান করা। ধর্মকে ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা করা নতুন কোনো বিষয় নয়। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে তারা যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে, সেটা মুক্তিযদ্ধের বিরোধীতার পাশাপাশি গণতন্ত্র, সংবিধান ও আইনেরও লঙ্ঘন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ও অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি সরকারকেও সাংবিধানিক ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ”

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, “এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। এরা পাকিস্তানি ও তালেবানি ভাবধারার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না এমন আইনও আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকা অবস্থায়ই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়ার হুমকি, এটা প্রকাশ্য ঔদ্ধত্য। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, জনমনে এ প্রশ্নও রয়েছে। রাষ্ট্রকে এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ”

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, “এ যাবতকালে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারাই এই স্বাধীনতাবিরোধী, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করেছে। আওয়ামী লীগও কখনও কখনও খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। সেই সূত্র ধরেই এরা এগিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, গণতন্ত্র, বঙ্গবন্ধুকে মানতে হবে। এরা এই চারটি বিষয়কে মানছে না। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ”

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বাংলানিউজকে বলেন, “দেশ যখন মুক্তিযুদ্ধের ধারা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রে নেমেছে। তারা যা বলছে তা সংবিধান ও আইন পরিপন্থি। আমাদের দাবি এদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ”

Pin It