বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নিজের হাতে লেখা নিয়ে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘স্মৃতি কথা’ প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেছেন, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’- এর বাইরেও তার (বঙ্গবন্ধু) কিছু লেখা আছে। তিনি নিজেই নাম লিখে গিয়েছিলেন ‘স্মৃতি কথা’।
“সেটা অনেকটা অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মতনই। তবে সেটা আরও বেশি তথ্য সম্বলিত, যা ইতোমধ্যে তৈরি করেছি। সেটা আমরা ছাপাব।”
এছাড়া ১৯৫২ সালের চীন সফরের অভিজ্ঞতা বঙ্গবন্ধু লিপিবদ্ধ করে গিয়েছিলেন, তাও বই আকারে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তার কন্যা শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে জানান, বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালে তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বাবাকে লেখার খাতা ও বই কিনে দিতেন। বাবাকে লেখার অনুপ্রেরণা যোগাতেন তিনি।
“সেই অনুপ্রেরণাতেই কিন্তু তিনি লিখতে শুরু করেন এবং তার জীবনের অনেক কিছু লিখেন। সব সময় আমার মা এই ব্যাপারে খুব সচেতন ছিলেন। তিনি যেমন কারাগারে খাতাগুলো দিতেন পাশাপাশি উনি (বঙ্গবন্ধু) বই পড়তে খুব পছন্দ করতেন, বইয়ের তালিকা দিতেন। মা বই কিনে দিতেন।
“যখন উনি মুক্তি পেতেন মা নিজে জেলগেটে যেতেন। সব সময় লেখার খাতাগুলো সংগ্রহ করতেন। সেই লেখার খাতাগুলো এনে রাখতেন।”
১৯৭১ সালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধুকে যখন গ্রেপ্তার করে নেওয়া হয়েছিল, তখন ছোট ছেলে রাসেলকে নিয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন ফজিলাতুন্নেসা মুজিব।
“তারপর ওই বাড়ি লুট হলেও ওই খাতাগুলো রাখা ছিল। আমার মায়ের নির্দেশে খাতাগুলো যেখানে ছিল সেখান থেকে উদ্ধার করেছিলাম,” বলেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা জানান, ১৯৭৫ সালে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কয়েক বছর পর তিনি যখন দেশে ফিরেছিলেন তখন তাকে ধানমণ্ডির ওই বাড়িতে ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান।
“হত্যাকাণ্ডের পর আমি যখন ফিরে আসি যতদিন জিয়াউর রহমান বেঁচে ছিল আমাকে কিন্তু ৩২ নম্বরের বাড়িতে যেতে দেয়নি। বাসায় তালা দেওয়া থাকায় আমরা রাস্তার উপর বসেই দোয়া করতাম। ওই বাড়িতে প্রবেশ নিষেধ ছিল। এরপর যখন সুযোগ পেলাম ঢোকার আমি প্রথমেই এই খাতাগুলো যেখানে আমার মা রাখতেন আমার জানা ছিল আমি সাথে সাথে খাতাগুলো সংগ্রহ করলাম।“
ঢাকায় তখন নিজের থাকার কোনো জায়গা ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, পরবর্তীতে সেই খাতাগুলো তিনি খুলনায় নিজের চাচির বাসায় রেখে সংগ্রহ করেছিলেন।
“তারপর আমি কীভাবে ছাপাব সেই কাজ শুরু করি। ওখান থেকেই আমরা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ টা প্রকাশ করেছি। সেখানে ৫৪ সাল পর্যন্ত তার স্মৃতিগুলো লেখা রয়েছে। এছাড়া তার লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’ টা এটা ৬৬ সাল থেকে ৬৮ সাল পর্যন্ত। তিনি যখন ৬ দফা দেওয়ার কারণে গ্রেপ্তার হলেন সেই সময়ে লেখা। এর বাইরেও তার (বঙ্গবন্ধু) কিছু লেখা আছে। তিনি নিজেই নাম লিখে গিয়েছিলেন ‘স্মৃতি কথা’।”
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, “তার (বঙ্গবন্ধু) নিজের জীবনী কথা গাফফার চৌধুরী সাহেব, মাহবুব তালুকদার সাহেব এরা কয়েকজন রেকর্ড করে নিতেন। আমাদের জওয়াহেদুল করিম সাহেবরা তার কথা রেকর্ড করতেন। রেকর্ডগুলো সব আমি পাইনি। গণভবনে খোঁজ করতে করতে চারটা টেপ পাই। পরে আমি আর বেবী মওদুদ সেগুলো নিয়ে বসি। স্ক্রিপ্ট তৈরি করি। তার স্মৃতি কথার সাথে এখানে অনেক কথা মিলে যায়। সেগুলো স্মৃতি কথার সাথে যেখানে যেখানে এটা সংযুক্ত হয় সেটা করে আমরা ওটা মোটামুটি তৈরি করে রেখেছি।”
এছাড়া বঙ্গবন্ধুর চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা বইয়ের কাজও মোটামুটি তৈরি হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি জাতির পিতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা যে সমস্ত রিপোর্ট পাঠাত খোঁজ করতে গিয়ে দেখলাম সেখানে তাকে নিয়ে ৪৮টা খণ্ড প্রায় ৪০ হাজারের মতো পাতা। আমি সেগুলো সব নিয়ে ফটোকপি করে রাখি। আমরা এই ফাইল নিয়ে দিনের পর দিন কাজ করতে থাকি। দ্বিতীয়বার যখন ক্ষমতায় আসি সিদ্ধান্ত নেই এগুলো আমরা প্রকাশ করব।
“যেহেতু এটা পুলিশের রিপোর্ট তাই পুলিশের সেই সময়ের এসবি কর্মকর্তা জাবেদ পাটোয়ারিসহ ২২ জন কর্মকর্তাকে নিয়ে ওই ধরনের রিপোর্ট জেলায় জেলায় কোথায় আছে সেটা সংগ্রহের উদ্যোগ নিই।”
পরবর্তীতে ৪০ হাজার পাতা পাওয়া যায়, সম্পাদনা শেষে সেগুলো এখন ছাপার জন্য তৈরি। হাক্কানি পাবলিশার সেগুলো পাবলিশ করতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড বের হয়েছে। তৃতীয় খণ্ড ছাপাখানায় চলে গেছে। চতুর্থ খন্ড প্রধানমন্ত্রীর কাছে রয়েছে। এভাবে ১৪ খণ্ড প্রকাশিত হবে।