করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে হাসপাতালে অন্য রোগীদের চিকিৎসা না পাওয়ার খবর আসতে থাকায় টেলিমেডিসিন সেবা দিতে ২০০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়ে একটি হটলাইন চালু করতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম বলেছেন, ‘শিগগিরই’ এই নেটওয়ার্ক চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তারা।
“তখন দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ ফোন করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ নিতে পারবেন।”
এ কাজটি সহজ করতে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবারের কারিগরি সহযোগিতা (স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক) পাওয়া যায় কিনা সে বিষয়েও আলোচনা চলছে বলে জানান ডা. রফিকুল।
এছাড়া গ্রামীণ ফোন ও আইসিটি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা মোটামুটি প্রস্তুত যে আমাদের ২০০ ডক্টরকে নিয়ে ২৪ ঘণ্টার সেবা চালু করব।”
করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর উপসর্গগুলো সাধারণ ফ্লুর মতই। কিন্তু এ রোগ এতটাই ছোঁয়াচে যে যথাযথ ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবস্থা না থাকলে ডাক্তার-নার্সদের পাশাপাশি হাসপাতালের অন্য রোগীরাও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ সর্দি-জ্বরের রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। আর সরকার ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ছুটি ঘোষণা করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় বয়স্ক অনেক জটিল রোগীকে নিয়ে স্বজনরা পড়ছেন ভোগান্তিতে।
এমনকি হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে ভর্তি করাতে না পেরে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগও এসেছে।
এ ধরনের সমস্যায় যেন সাধারণ অসুখ-বিসুখে মানুষ ঘরে বসেই চিকিৎসকের পরামর্শ পেতে পারেন- সেই ভাবনা থেকেই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বড় পরিসরে টেলিমেডিসিন সেবা চালুর এই পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানান অধ্যাপক রফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “যেসব রোগের বিষয়ে ফোনে পরামর্শ দেওয়া সম্ভব তা এই হটলাইনে পাওয়া যাবে। আর যাদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে যাওয়া জরুরি মনে হবে, তাদের ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থা করা হবে।”
এ সংক্রান্ত কমিটির সদস্য বিএসএমএমইউ’র রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীম আহমেদ বলেন, “আমরা এমন একটি হটলাইন করছি যেখানে কয়েকশ চিকিৎসক অ্যাভেইলেবল থাকবেন। এটার পরিকল্পনা অনেকটা উবারের মত। অর্থাৎ হটলাইনে কেউ ফোন করলে সংশ্লিষ্ট যে চিকিৎসক অ্যাভেইলেবল থাকবেন তাকে কলটি দেওয়া হবে।”
জ্বর-সর্দির রোগীদের আলাদাভাবে চিকিৎসা দিতে শাহবাগের পুরাতন বেতার ভবনে আলাদা একটি ইউনিট চালু করা হচ্ছে বলে উপ-উপাচার্য রফিকুল জানিয়েছেন।
টেলিভিশনেও চিকিসৎসা পরামর্শ
ডায়েবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, কিডনি রোগসহ অন্যান্য জটিল রোগের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে টেলিভিশনে সরাসরি ফোন কলের মাধ্যমে পরামর্শ সেবা দেওয়ার একটি উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বলে বিএসএমএমইউ’র উপ-উপাচার্য জানান।
তিনি বলেন, “দুটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাথে আমাদের আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষে স্টুডিও করে সেখান থেকে লাইভ প্রচার করা হবে। যে কেউ ফোন করে সংযুক্ত হয়ে সমস্যার কথা বলে পরামর্শ সেবা নিতে পারবেন।”
ডা. শামীম আহমেদ জানান, টেলিভিশনের টিকারে নম্বর দেখে রোগী ফোন করে কথা বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারবেন। একটা নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ করে বিকাল বেলায় সারা দেশ থেকে যে কেউ কথা বলতে পারবেন।
মুগদা মেডিকেলে টেলিমেডিসিন সেবা চালু
রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টেলিফোনে চিকিৎসা সেবা চালু করা হয়েছে। ০১৮৪৪৬৬৫৩৩৬, ০১৮৪৪৬৬৫৩৩৭ ও ০১৮৪৪৬৬৫৫৮৫ নম্বরে ফোন করে যে কেউ চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ সেবা নিতে পারবেন।
গত ২৬ মার্চ থেকে চালু হওয়া ২৪ ঘণ্টার এসব হটলাইনে দিনে ২০ থেকে ২৫ জন রোগী সেবা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির উপ-পরিচালক আবু হাশেম শেখ।
তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী এই সেবার জন্য ব্যক্তিগতভাবে হাসপাতালে তিনটি মোবাইল ফোন দিয়েছেন।
“রোগীরা একটা এসএমএস দিলেই আমরা ফোন ব্যাক করি। রোগীর সমস্ত সমস্যা ও অভিযোগ শোনার পর একটা প্রেসক্রিপশন করা হয়। এরপর তা রোগীকে পাঠানো হয়। রোগীর যদি ওষুধ কেনার সামর্থ্য থাকে তাহলে ওই প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে নিবেন। আর যদি তা না থাকে আর যদি আমাদের হাসপাতালের আশপাশের কোনো এলাকায় তিনি থেকে থাকেন, তাহলে হাসপাতালে এসে ওষুধ নিতে পারবেন।”
হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের ৪২৯ নম্বর কক্ষে থেকে পরিচালিত এই টেলিমেডিসিন সেবা সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা, বেলা ২টার পর থেকে রাত ৮টা এবং রাত ৮টার পর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত তিন শিফটে চালু রয়েছে।
আবু হাশেম শেখ জানান, প্রতি শিফটে দুইজন চিকিৎসকসহ তিনজন এ দায়িত্ব পালন করেন। একজন মেডিকেল অফিসার, একজন সহকারী অধ্যাপক এবং একজন স্টাফ থাকেন।
যদি করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী ফোন করেন তাহলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
“মুগদার আশপাশের রোগী থাকলে সেই অ্যাম্বুলেন্সে করে চিকিৎসা দেওয়ার মত সরকারের নির্ধারিত হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আর যদি দেখা যায় রোগী সিরিয়াস না, সর্দি-কাশি বা শ্বাস কষ্ট আছে, তাহলে নমুনা সংগ্রহ করা হবে।”
করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলে আইইডিসিরআর থেকে একটি টিম রোগীর বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে আসছেন বলে জানান হাশেম।
মুগদা মেডিকেলেও করোনাভাইরাসের রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে জানিয়ে হাসপাতালের উপ-পরিচালক বলেন, “৬০টি বেড ও ১০টি আইসিইউ ভেন্টিলেটর ইতোমধ্যে আমরা ইন্সটল করে রেখেছি। এখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ভর্তি করার জন্য যদি সরকার ঘোষণা করে, সেজন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।”