‘আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদিকে দিয়ে মাদক প্রতিরোধ এবং সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানকে নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটি গঠন কতটা কার্যকর হবে’ এমন প্রশ্ন তুলেছেন সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমাম।
জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অভিজ্ঞতার কারণে শাজাহান খানকে কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে ব্যক্তি কোনো বিষয় নয়। শাজাহান খানের নাম প্রস্তাব করা হলে ওই বৈঠকে উপস্থিত কেউই তার বিরোধিতা করেনি বলেও জানান তিনি।
সোমবার সংসদের বৈঠকে মন্ত্রীদের প্রশ্নোত্তরে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বিকেল পৌনে ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
শাজাহান খানকে নিয়ে এমন প্রশ্নে ফখরুল ইমামের বিরোধিতা করেন সরকারি দলের আরেক সাংসদ শামীম ওসমান। প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে ব্যক্তিগত কৈফিয়তে দাঁড়ান শাজাহান খান। তিনি ফখরুল ইমামের এমন মন্তব্যকে দুঃখজনক হিসেবে আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা জানান এবং তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার অথবা স্পিকারকে এক্পাসঞ্জ করার দাবি জানান।
এ সময় তিনি নিজেকে দীর্ঘদিনের একজন শ্রমিক নেতা হিসেবে দাবি করে দেশের সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিজের বিভিন্ন ভূমিকা তুলে ধরেন।
সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী ও বর্তমান এমপি শাজাহান খানকে। এর আগে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তার একাধিক মন্তব্যে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এমনকি তার ব্যঙ্গাত্মক হাসির জের ধরে গত বছরের জুলাইয়ে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা রাজপথে নেমে আসে বলেও কারও কারও অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে নবম ও দশম সংসদে কক্সবাজার থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। এবারের নির্বাচনে তাকে এ কারণেই আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না দিয়ে তার স্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে বলে দলের মধ্যেই আলোচনা আছে।
সম্প্রতি কক্সবাজারে ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণের নেপথ্যেও তার ভূমিকা রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। ফখরুল ইমাম তার প্রশ্নে আরও বলেন, গরু-ছাগল চিনলে লাইসেন্স দেওয়া যাবে-শাজাহান খানের এই মন্তব্যে সারাদেশে তোলপাড় হয়েছিল। তার এক হাসি ওই সময় দেশে কী পরিস্থিতি তৈরি করেছিল? তাকে দিয়ে সরকারের কতখানি কমিটমেন্ট রক্ষা হবে?
তবে জাপা সাংসদের প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী আরও বলেন, অভিজ্ঞতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে শাজাহান খানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে দেশে দুর্ঘটনাজনিত পরিস্থিতির কিছু অবনতি ঘটায় জরুরি ভিত্তিতে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভা বসেছিল। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রী, পরিবহন সংশ্নিষ্ট নেতৃবৃন্দ, ইলিয়াস কাঞ্চন, সৈয়দ আবুল মকসুদসহ সড়ক বিশেষজ্ঞরা, সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব ও পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা ছিলেন। সভায় সবার উপস্থিতিতে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে একটি সুপারিশমালা তৈরির জন্য ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে শাজাহান খানের নামটি প্রস্তাব করা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত কেউ এই প্রস্তবের বিরোধিতা করেননি। তার নেতৃত্বে আরও ১৪ জন এই কমিটিতে রয়েছেন।
অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সড়কে বিশৃঙ্খলার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা ভিআইপি হয়ে উল্টোপথে যাই। এটা তো স্বাভাবিক বিষয় নয়। ভিআইপিরা অসাধারণ মানুষ, তারা যদি উল্টো পথে চলেন তাহলে সাধারণ মানুষ কী করবে?
সড়কে দুর্ঘটনার বিষয়টি সবচেয়ে দুর্ভাবনা মন্তব্য করে তিনি বলেন, কেবল ডিভাইডার দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়। পাশে ফুট ওভারব্রিজ থাকলেও দেখা যায় মানুষ লাফ দিয়ে ডিভাইডারের ওপর দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। সড়কে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে শৃঙ্খলা রক্ষা করা; কিন্তু কেউ এটা মানতে চান না। মোবাইল ফোন কানে দিয়ে মধুর স্বরে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হন আর বাস চাপা দিয়ে চলে যায়।
রাজশাহী-৩ আসনের আয়েন উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের জানান, দেশে সড়ক পরিবহনের আওতায় রাস্তার পরিমাণ ২১ হাজার ৫৯৫ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক তিন হাজার ৯০৬ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক চার হাজার ৪৮২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার ও জেলা সড়ক ১৩ হাজার ২০৬ দশমিক ৯২ কিলোমিটার। মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী সড়ক বিভাগের সবচেয়ে বেশি রাস্তা রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭৭ দশমিক ৫২ কিলোমিটার এবং সবচেয়ে কম মেহেরপুর জেলায় ১২৪ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার।