করোনাভাইরাসের মতোই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও সরকার উদাসীন ও নিষ্ক্রিয় বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার দুপুরে উত্তরায় নিজের বাসা থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “করোনা মোকাবিলায় যেমন সরকার একেবারেই ব্যর্থ, চরম উদাসীনতা, অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে গোটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ঠিক তেমনি বন্যার বিষয়েও সরকারের নিরবতা, নিষ্ক্রিয়তা মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করছে।
“একজন মন্ত্রী তো বলেই ফেললেন ‘বন্যার বিষয়ে এতোটুকু চিন্তিত নই’- ভালো কথা। এই যে প্রতিদিন গণমাধ্যমে আসছে- আমরা বন্যার্ত মানুষের আহজারি ও তাদের অসহায়ত্ব কথা, সহায় সম্বল হারিয়ে সড়কের অথবা বাঁধের ওপরে আশ্রয় নেওয়া শিশু সন্তান, বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অভুক্ত থাকা- এই বিষয়গুলো তাদের চিন্তিত করে না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, কারণ সরকার তো ধরাছোঁয়ার বাইরে। জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হয় না। এসব দুযোর্গ এলে বরং তারা খুশি হন এ কারণে যে, তাতে দুর্নীতির নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়।
বন্যার্ত এলাকায় সরকারের ত্রাণ তৎপরতার পরও উদাসীনতার অভিযোগ করার কারণ জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এখন পর্যন্ত বন্যার জন্য কী পরিমাণ ত্রাণ সরকার কি দিয়েছে তা দেশবাসী জানেই না। এই ধরনের কোনো রিপোর্ট আমরা পাইনি যে, বন্যার জন্য ত্রাণ কোথাও ….।
“যেমন আমি জানি, কুড়িগ্রাম, লারমনিহাট জেলায় প্রথম দিকে কিছু সাহায্য দিয়েছে। তা তো … । আমরা মিডিয়া গুলোতে দেখতে পারছি যে, তারা বলছে যে তারা কেউ ত্রাণ পাচ্ছে না।”
ফখরুল বরেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সরকার যতবারই ত্রাণ বিতরণে গেছে সেখানে চুরি হয়েছে। মহামারীতে ত্রাণ বিতরণের চুরিতে তারা কোনো কিছুই বাদ রাখেনি- চাল, সোয়াবিন তেল থেকে শুরু করে সবই চুরি করেছে।
“এখন বন্যার যে ত্রাণ অবিলম্বে শুরু করা দরকার, তার কোনো কার্যক্রই আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এখন সকল শক্তিকে এক করে ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে, খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।”
দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুককে আহ্বায়ক করে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান মির্জা ফখরুল।
বাংলাদেশ বন্যার জন্য ভারতীয় বাঁধ খুলে দেওয়াকে দায়ী করে তিনি বলেন, “ভারতের অভিন্ন নদীগুলোর সকল বাঁধ ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়ায় উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা, মহানন্দা, পদ্মা, তিস্তা ও ধরলা নদীর অবাহিকায় প্রায় ৩৪টি জেলা ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়ে গেছে। কয়েকটি জেলায় এক মাসের মধ্যে দুই-তিন বার বন্যার পানি উজান থেকে এসে ঘর-বাড়ি, ফসলের ক্ষেত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
“ভারতের সঙ্গে যে অভিন্ন নদী প্রায় ১৫৪টি, একমাত্র পদ্মার ফারাক্কা বাঁধ ব্যতীত কোনটারই কোনো পানি বণ্টন চুক্তি ভারতের অনীহার কারণে সম্পন্ন হয়নি। তিস্তার চুক্তির কথা ফলাও করে এই সরকার প্রচার করলেও গত এক দশকে কোনো চুক্তি করতে সক্ষম হয়নি। এই সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে প্রায় প্রতি বছর বাংলাদেশের নদী অববাহিকায় বসবাসকারী মানুষেরা এই বন্যায় আক্রান্ত হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।”
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জনগণের সরকার না থাকলে, জনগণের প্রতিনিধি না থাকলে, জনগণের পার্লামেন্ট না থাকে তাহলে মানুষের সমস্যার সমাধান হতে পারে না। এই অনির্বাচিত সরকারের দ্বারা কখনোই জনগণের সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে না।
“তারা শুধু মেগা প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তারা তাদের নিজেদের পকেট ভারী করার কাজই করবে।”
ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে দলের গঠিত জাতীয় ত্রাণ কমিটির আহবায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও যুক্ত ছিলেন।