২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে বিশেষ নজর দিয়েছে সরকার। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের সব কার্যক্রম অব্যাহত রেখে এ খাতে বরাদ্দ এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কিছু কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতার পরিমাণও বাড়ছে। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সন্মানী ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ হাজার টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে ৭৪ হাজার ৩শ ৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন বাজেটের ১৪ দশমিক ২১ শতাংশ এবং মোট প্রবৃদ্ধির ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ৬৪ হাজার ৪শ ৪ কোটি টাকা।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে এই বারাদ্দ রেখে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দারিদ্র বিমোচন এবং বৈষম্য হ্রাসকরণে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়। এর বাস্তবায়নে অ্যাকশন প্ল্যান ২০১৬-২১ অনুমোদিত হয়েছে। সরকার দরিদ্র জনগণের অবস্থা উন্নয়নে প্রতিবছর এ খাতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে। বর্তমানে দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এসেছে। আগামী ৫ বছরে এ খাতে বরাদ্দ দ্বিগুন হবে।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রস্তাবিত বাজেটে চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের তুলনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৭৪ হাজার ৩’শ ৬৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। এ খাতের আওতায় প্রতিটি কর্মসূচিতেই উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪৪ লাখ করা হয়েছে। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা ভোগীর সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে এ সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ। প্রস্তাবিত বাজেটে এটা করা হয়েছে ১৭ লাখ। অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ ৪৫ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তির সংখ্যা ৯০ হাজার থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ লাখ। উপবৃত্তির হার প্রতিটি স্তরে ৫০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে ৭’শ টাকা থেকে ৭’শ ৫০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৭’শ ৫০ টাকা থেকে ৮’শ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৮’শ ৫০ টাকা থেকে ৯’শ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জাীববনমান উন্নয়নে এ কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ৬ হাজার জনে উন্নীত করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উপকারভোগীর সংখ্যা নির্ধারন করা হয়েছে ৬৪ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৮৪ হাজার। ক্যান্সার,কিডনি,লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার করা হয়েছে। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে তাদের উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজারে। প্রস্তাবিত বাজেটে দরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগীর সংখ্যা ৭ লাখ থেকে ৭ লাখ ৭০ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তার আওতায় ভাতাভোগীর সংখ্যা। এ সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ ৭৫ হাজার করা হয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী দারিদ্র্য বিমোচনে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের বিষয়ে বলেন, পল্লী অঞ্চলের অনগ্রসর ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম শুরু করেন। সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে পল্লী সমাজসেবা (আরএসএস) কার্যক্রম, পল্লী মাতৃকেন্দ্র (আরএমসি) কার্যক্রম,দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রম, শহর ও সমাজ উন্ধয়ন কার্যক্রম নামে চারটি সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে পরিবার প্রতি ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা হারে সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ হিসেবে অতি দরিদ্র জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এ সব কার্যক্রমে শতকরা ৫০ ভাগ নারীক অর্ন্তভুক্তি করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এ কর্মসূচিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
উপকারভোগীদের ভাতা প্রদান প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কার্যকারিতা বাড়ানোর লক্ষে সঠিক উপকারভোগী নির্বাচন নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে সকল কর্মসূচির এমআইএস এবং উপকারভোগীর তথ্যভান্ডার প্রস্তুত এবং ভাতাভোগীদের নিকট সরাসরি সরকারি কোষাগার হতে জি-টু-পি পদ্ধতিতে অর্থ প্রেরণ করা হচ্ছে।