ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ার পর পরিবহণ মালিক সমিতির টানা তিনদিন ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ। ভাড়া বাড়িয়ে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর পাঠকদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বেশিরভাগ পাঠক বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। অনেকেই বলছেন, ‘দেশটা মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। দাম বাড়ে তেলের, ভাড়া বাড়ে বাসের আর বলির পাঁঠা জনগণ’।
ভাড়া বাড়ার ব্যাপারে দর্শক-পাঠকের প্রতিক্রিয়া জানতে শত শত পাঠক মন্তব্য করেছেন। এরমধ্যে বাছাইকৃত কিছু মন্তব্য তুলে ধরা হলো- সাইফুল ইসলাম শান্তি নামের একজন মন্তব্য করেছেন, দাম বাড়ে তেলের, ভাড়া বাড়ে বাসের আর বলির পাঁঠা জনগণ। যখন চালের বাজারে আগুন, সবজির দাম আকাশচুম্বী, সেই মূহুর্তে দেশে জ্বালানি তেলের দাম ও পরিবহনে ভাড়া বাড়ানোটা জনগণের ওপর একপ্রকার জুলুম-নির্যাতনের শামিল। আমরা এই সিদ্ধান্ত মানি না, মানছি না। সরকারকে বলবো দ্রুত এই হঠকারী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন।
মধ্যবিত্তরা সংসারের ঘানি টাইতে হিমশিম খাচ্ছেন উল্লেখ করে জুনায়েদ আহমেদ লিখেছেন, ভাড়া ১০০ ভাগ বাড়ালে সমস্যা কি ছিল? এখনতো বলার কেউ নেই, যার যেভাবে ইচ্ছে তারা সেভাবে দেশ চালাচ্ছে। দেশের জনগণের কষ্টতো তারা বুঝতেছে না। তারা তো মনে করছে দেশটা সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া, লন্ডন। কিন্তু আমরা যারা মধ্যবিত্ত পরিবার, গরিব নিম্নআয়ের মানুষ আছি, আমরাই বুঝতেছি জীবনটা কীভাবে যাচ্ছে, কত কষ্ট করে সংসার চালাতে হচ্ছে।
রাহাদ খান নামের একজন পাঠক মন্তব্য করেছেন, চাকরিজীবি মানুষের যে বেতন বাড়ছে না সেটা নিয়ে কেউ কথা বলে না। এমনিতেই নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তার ওপর আবার যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি ২৭%, কিন্তু নেবে তো পুরাই ৫০ শতাংশ৷
মামুনুল ইসলাম মন্তব্য করেছেন, অযথা সাধারণ মানুষের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হলো। সীমিত আয়ের যারা, তাদের জন্য সবকিছু অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। কালিপদ সরকার লিখেছেন, জনগণের কথা কে শুনবে? এ দেশে জন্ম নেওয়াই আমাদের অপরাধ। মাহবুবুর রহমান লিখেছেন, সোনার বাংলাদেশে সব কিছুর দাম বাড়লো কিন্তু মানুষের দাম বাড়লো না। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে জান্নাতুন খুশি লিখেছেন, এটা ডিজেলের দাম বাড়ানো না বরং সাধারণ জনগণের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করার একটা ফন্দি। এখন উচিত সাধারণ জনগণরা বাসে না উঠে ধর্মঘট ডাকা। জনগণের রক্ত চুষে খাওয়ার কায়দা করছে।
মোর্শেদ আলম লিখেছেন, দেশের নাগরিকদের আয় আন্তর্জাতিক মানের করার খবর নাই কিন্তু ব্যয় আন্তর্জাতিক ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করছে মন্ত্রী। তেলের ব্যবসা, পরিবহণের ব্যবসা যে লোকগুলো করে আবার সমস্যা সমাধান করার জন্য তাদের নেতৃত্বেই বৈঠক বসে জনগণের ওপর সব কিছু চাপাই দেয়। মোহাম্মদ কায়সার লিখেছেন, পরিবহণ মালিক আর সরকারের যৌথ প্রযোজনায় জনগণের মাথায় বাড়ি। ইয়াসিন আরাফাত লিখেছেন, দেশটা মগেরমুল্লুক, যে ভাবে ইচ্ছে জনগণকে পিষে মারতেছে। সাজ্জাদ চৌধুরী লিখেছেন, অবিচার করা হলো। সাধারণ জনগণের ওপর এর বিচার হবে একদিন ইনশাআল্লাহ্। ক্ষোভ প্রকাশ করে হারুন অর রশি হারুন ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, উন্নয়নের বাংলাদেশে এটা কোনো ব্যাপারই না ভাই। সুজন বড়ুয়া লিখেছেন, লাভ একটাই, জনগণের বাঁশ খাওয়া
কেউ কেউ আবার জনগণকে ভাড়াবৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। সাইফুল ইসলাম রানা নামে একজন লিখেছেন, ঢাকা শহরে গণপরিবহণের ৯০ শতাংশ-ই সিএনজি চালিত, ছোট বড় সব বাসেই সিএনজি সিলিন্ডার লাগানো। ডিজেলের দাম বাড়লে তাদের কি? এসব বাসে কেউ অতিরিক্ত ভাড়া গুনবেন না, প্রয়োজনে সবাই মিলে প্রতিবাদ করুন। আনোয়ার হোসেন লিখেছেন, প্রতিটা গাড়ির গায়ে স্পষ্ট করে বড় আকারে লেখা থাকতে হবে, এটা ডিজেল চালিত না সিএনজি চালিত। সিএনজি চালিত গাড়িগুলো ভাড়া বাড়াতে পারবে না। ফলে যাত্রীরাও অযথা হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া থেকে রেহাই পাবে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ভাড়ার সঙ্গে তুলনা করে মশিউর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এভাবে, ‘প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তেলের দাম কম তাই তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়া বৃদ্ধির জন্য বাস মালিকরা ধর্মঘট করছেন। এখন চলুন দেখা যাক বাংলাদেশ ও ভারতে বাস ভাড়ার একটি তুলনা: ঢাকা চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৬৫ কিলোমিটার। এসি বাসের ভাড়া ১২০০ টাকা। কিলোমিটার প্রতি ভাড়া: ৪.৫০ টাকা। কলকাতা থেকে পূরী সড়ক পথে ৫০৫ কিলোমিটার। এসি ভলভো বাসের ভাড়া ৭০০ রুপি। বাংলাদেশী টাকায় ৮০৯ টাকা। কিলোমিটার প্রতি ভাড়া: ১.৬০ টাকা। তাহলে কি বুঝলেন?
মো. রাফসান নামের এক পাঠক লিখেছেন, সরকারের নিয়মানুযায়ী আগে যখন ১.৪২ পয়াসা ছিল পার কিলোমিটার তখন ভাড়া আসতো (কুমিল্লা টু ঢাকা) ১৩৫ টাকা। কিন্তু তখন নেওয়া হতো ২০০ এখন ১.৮২ টাকা করার পর ভাড়া আসে ১৭৩ টাকা। অথচ এখন নিচ্ছে ২৫০ টাকা। এই হচ্ছে আমাদের দেশ। ভাড়া বাড়িয়েই দায়িত্ব শেষ। গজবের অপেক্ষা করো। অসহায় মানুষের আর কেউ না থাকলেও আল্লাহ আছে।
মো. জুয়েল হোসাইন নামের একজন পাঠক লিখেছেন, আমাদের দেখায় কারো কিছু আসে যায় না। আমাদের আর্তনাদ কারো কানে কোনো দিন পৌঁছায়নি আর কোনো দিন পৌঁছাবেও না। তাই এসব নিয়ে আর মন্তব্য করতে ইচ্ছে করে না। শফিকুল ইসলাম লিখেছেন, মন্তব্য কোরে লাভ কি, জনগণের কথার কোনো দাম নাই। মো. শফিকুল ইসলাম নামের আরেকজন লিখেছেন, মধ্যবিত্ত আর দরিদ্রদের বিষ খাওয়াই মারি ফেল, তোরাই বেঁচে থাক দুর্নীতিবাজ,ঘুষখোর আর দালালেরা!