বসতে বাকি আর মাত্র একটি স্প্যান দৃশ্যমান পদ্মা সেতুর ৬ কিমি

AO-Si-Raj-Padma-Setu-400x221

অপেক্ষার প্রহর শেষ। পদ্মা সেতুতে বসলো ৪০তম স্প্যান। এখন দৃশ্যমান ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু। শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে মাঝনদীতে ১১ ও ১২ নম্বর পিলারে স্প্যানটি বসানো হয়। আর মাত্র ১টি স্প্যান বসলেই দৃশ্যমান হবে পুরো পদ্মা সেতু। বাকি স্প্যানটি বসবে আগামী সপ্তাহে।

পদ্মা সেতুর প্রকৌশলী সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে ২ পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে স্প্যান বহনকারী ভাসমান ক্রেনটি পজিশনিং করে। এরপর স্প্যানটিকে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। পরে রাখা হয় ২টি পিলারের বেয়ারিংয়ের ওপর। স্প্যানটি বসানোর জন্য ধাপগুলো সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় প্রকৌশলীদের বেগ পেতে হয়নি। কোনো রকম বাধা ছাড়াই স্প্যানটি বসাতে পেরে খুশি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। এরপর প্রথম স্প্যান বসানো হয়েছিল ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এরপর নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ধাপে ধাপে স্প্যান বসতে থাকে। আমাজন নদীর পরই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি খরস্রোতা ও প্রমত্তা নদী পদ্মার বুকে দাঁড়িয়েছে পিলার। যাতে বসানো হয় স্প্যানগুলো। কাজের অগ্রগতি কতটা হচ্ছে, তা স্প্যান বসানোর ওপর নির্ভর করে। শুরুর দিকে একেকটি স্প্যান বসানো হতো কয়েক মাসের ব্যবধানে। এরপর কম সময়ের ব্যবধানে স্প্যান বসানোর সংখ্যা বাড়তে থাকে। পাশাপাশি স্প্যান বসানোর অভিজ্ঞতাও বাড়তে থাকে প্রকৌশলীদের। আর এর জন্য স্প্যান বসাতে সময়ও কমেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, নির্মাণ কাজের শুরুতে মাটির গঠনগত বৈচিত্র্য ও গভীরতার ভারসাম্যের তারতম্যের কারণে পিলারের নকশা জটিলতায় পড়েছিল প্রকল্পটি। সবশেষ করোনা পরিস্থিতি প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে গতি কম হলেও একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি কাজ। পদ্মা সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এ পর্যন্ত বসানো হয়েছে ৪০টি স্প্যান।

১১ ও ১২ নম্বর পিলারের আশেপাশে চলাচলকারী নৌযানগুলো যাতে স্প্যান বসানোর কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত না করে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর জন্য সেনাবাহিনীর বোট সারাক্ষণ সেখানে নজরদারি করেছে। নৌযাগুলোকে নিরাপদ দূরত্ব রেখে চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয় সেসময়।

এখন ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি স্প্যান বসিয়ে দিলেই বিজয়ের মাসে পদ্মা জয় করবে পদ্মা সেতু। আর এ স্প্যানটিও প্রস্তুত কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। আর তখন নদীর ওপর দেখা যাবে ৬ হাজার ১৫০ মিটার অর্থাৎ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের অবকাঠামো। সেতুর কাজে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, শ্রমিকরাও শেষ স্প্যান বসানোর অপেক্ষায়। চলতি বছর করোনা পরিস্থিতি ও বন্যার কারণে চার মাস স্প্যান বসানো হয়নি। কিন্তু গেল দুই মাসে ৮টি স্প্যান বসানো হয়ে। পরিবার পরিজন থেকে দূরে থেকে নির্মাণ কাজে সংশ্লিষ্টরাও কাজের গতি সচল রেখেছেন। সেতুর অনেকটাই দৃশ্যমান হওয়ায় পদ্মাপাড়ের সবার চোখে মুখে এখন আনন্দের হাসি।

পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, স্প্যান বসানোর কাজ এ মাসে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা আনন্দিত। তবে সবচেয়ে বেশি খুশি হবো যখন যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে সেতুটি। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি থাকা স্প্যান বসানো হবে।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানো হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব। এছাড়া ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বসানো স্প্যানগুলোতে এসব স্ল্যাব বসানো হচ্ছে।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

Pin It