রাজধানীর বহুতল ভবনগুলোর নির্মাণকাঠামো ও ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করতে মাঠে নেমেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক। মঙ্গলবার রাজউকের ২৪টি দল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার শ’খানেক বহুতল ভবন পরিদর্শন করে। এদিন শুধু ১০ ও এর বেশি তলাবিশিষ্ট ভবন পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনে দেখা যায়, অনেক ভবনেই রাজউক অনুমোদিত নকশা অবজ্ঞা করা হয়েছে। আর নকশা মেনে তৈরি হলেও ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য কাজে। এ ছাড়া অর্ধেকের বেশি ভবন রয়েছে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের এক পরিচালক সমকালকে বলেন, রাজউকের দলগুলো বিভিন্ন ভবনে গিয়ে প্রথমেই কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভবনের নকশা চেয়ে নেয়। তারপর নকশার সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজে বের করে। এ জন্য তারা ভবনের ছাদে উঠে নকশা অনুযায়ী মাপ ঠিক আছে কিনা দেখে নেন। পরে তারা প্রত্যেক তলা পরিদর্শন করেন। ভবনগুলোতে পরামর্শ মতো অগ্নিনির্বাপণ সামগ্রী রাখা হয়েছে কি-না তাও যাচাই করেন তারা। ছোটখাটো ত্রুটি থাকলে তা ভবন মালিককে নিজ উদ্যোগে সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন তারা। আর বড় সমস্যাগুলো লিখে নিয়ে এসেছেন।
রাজউকের এক কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবারের পরিদর্শনে দেখা যায়, একটি ভবনে গ্যাস সংযোগ নেই। সেখানে সিলিন্ডারের গ্যাস দিয়ে রান্না করা হয়। দেখা গেছে, বারবার কেনার বিড়ম্বনা এড়াতে ভবনটিতে বিপুল পরিমাণে গ্যাসের সিলিন্ডার মজুদ করে রাখা হয়েছে। তবে একসঙ্গে এত সিলিন্ডার রাখা আরও বিপজ্জনক হওয়ায় ভবন মালিককে তা অপসারণ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ধানমণ্ডির ৩/এ নম্বর রোডের একটি ভবনে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা আছে। আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলতে পারে না বিধায় তিন দিনের মধ্যে তা অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিদর্শক দলের সদস্যরা জানান, মাঠ পর্যায়ে দু’দিনের পরিদর্শন কার্যক্রম শেষে দেখা যাচ্ছে, বহুতল ভবনগুলোর বেশিরভাগই নকশা মেনে তৈরি হয়েছে। দু-একটি ভবনের তলার সংখ্যা বাড়ানোর ঘটনা আছে। কিন্তু যেভাবে ভবনটি ব্যবহারের কথা, সেটা করা হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, উন্মুক্ত স্থানের জায়গায় ছোট অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। হয়তো একটি এটিএম বুথ বসানো হয়েছে। আবার পার্কিংস্থলকে অন্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু আবাসিক ভবনের অংশ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতেও দেখা গেছে।
তারা আরও বলেন, একটি ভবনের সবকিছু দেখতে বেশ সময় ব্যয় হচ্ছে। প্রতিদিন একেকটি পরিদর্শক দল ৪-৫টির বেশি ভবন পরিদর্শন করতে পারছে না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিদর্শক দলগুলো কাজ করছে। ২৪টি দল টানা ১৫ দিন এই কার্যক্রম চালাবে। রাজউকের আটটি অঞ্চলের প্রত্যেকটি থেকে তিনটি করে দল মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। এই দলে রয়েছেন অথরাইজড অফিসার, সহকারী অথরাইজড অফিসার, ইন্সপেক্টরসহ অন্যরা। এ ছাড়া কোনো কোনো দলে প্রধান ইমারত পরিদর্শক ও পরিচালকও উপস্থিত থাকছেন। পরে রাজউকের পক্ষ থেকে ভবন-সংক্রান্ত তথ্যগুলো সংবাদমাধ্যমে জানানো হবে।
অর্ধেকের বেশি ভবন অগ্নিঝুঁকিতে : এদিকে গুলশান-বনানীসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভবন পরিদর্শন করেছেন ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অর্ধেকের বেশি ভবন অগ্নিকাণ্ডের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে বাকি ভবনগুলোও নিরাপদ নয়, কারণ তাদের অগ্নিনির্বাপণের সরঞ্জাম পর্যাপ্ত নয়।
গত ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বহুতল ভবনগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করে ফায়ার সার্ভিস। সোমবার তাদের ১০টি দল গুলশান-বনানী এলাকার বিভিন্ন ভবন পরিদর্শন করে। তখনও তারা ভবনগুলোয় জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি ও আগুন নেভানোর যথেষ্ট সরঞ্জাম না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন দলগুলোর সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, গতকাল মঙ্গলবার সাতটি দল গুলশান, বনানী ও পুরান ঢাকার বহুতল ভবনগুলোর তথ্য সংগ্রহ করে। পাশাপাশি ভবন কর্তৃপক্ষকে তাদের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ঘাটতি সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিস বারিধারা স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, সবগুলো বহুতল ভবন পরিদর্শন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। সারাবছরই এই কার্যক্রম চলে, তবে বনানীতে অগ্নিকাণ্ডের পর এখন ওই এলাকার ভবনগুলোয় অভিযান চলছে।