প্রথম ম্যাচের ভুলগুলো দ্বিতীয় ম্যাচে শোধরাতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। বাস্তবে দেখা গেল উল্টো চিত্র। ব্যাটিং হলো আগের দিনের চেয়ে ঢিমেতালে। বোলিং একদমই ধারহীন। পারফরম্যান্সে নেই পরিকল্পনার ছাপ, শরীরী ভাষায় নেই কোনো ঝাঁঝ। ফলও তাই অনুমেয়। পাকিস্তানের কাছে পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৯ উইকেটে গুঁড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। তিন ম্যাচের সিরিজ তারা জিতে নিল প্রথম দুই ম্যাচেই।
লাহোরে শনিবার তামিম ইকবাল খেলেন ৬৫ রানের ইনিংস। কিন্তু বল খেলেন ৫৩টি! ব্যাটিং লাইনআপের বাকিদের অবস্থাও তথৈবচ। ২০ ওভারে তাই বাংলাদেশ করতে পারে কেবল ১৩৬ রান।
রান তাড়ায় পাকিস্তান জিতে অনায়াসে। শুরুতে উইকেট হারালেও বাবর আজম ও মোহাম্মদ হাফিজের শতরানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জয় ২০ বল বাকি রেখেই।
গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের উইকেট আগের দিনের মতো অতটা মন্থর ছিল না এ দিন। ১৬০-১৭০ হতে পারত লড়ার মতো রান। বাংলাদেশ পারেনি কাছে যেতেও।
বাংলাদেশের ভোগান্তির শুরু ম্যাচের শুরু থেকেই। শাহিন শাহ আফ্রিদির অফ স্টাম্প ঘেঁষা ডেলিভারিতে ব্যাট ছুঁইয়ে আউট হন মোহাম্মদ নাঈম শেখ।
এবারের বিপিএলে তিন-চারে নেমে ব্যাটিং সামর্থ্যের ঝলক দেখানো মেহেদি হাসানকে সুযোগ দেওয়া হয় তিনে। প্রায় দুই বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ম্যাচে খানিকটা আশা জাগিয়েছিলেন তিনি ইমাদ ওয়াসিমকে স্লগ সুইপে ছক্কা মেরে। কিন্তু মোহাম্মদ হাসনাইনের গতি সামলাতে না পেরে আউট হন বাজে শটে।
আরেক পাশে তামিম এগোতে থাকেন নিজের গতিতে। বল প্রতি রান তুলেছেন ঠিকই, কিন্তু ছিল না টি-টোয়েন্টির তাড়া। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে রান তাই ২ উইকেটে ৩৩।
রানের গতিতে দম দিতে পারেননি লিটন দাসও। হারিস রউফকে দৃষ্টিনন্দন একটি চার মারেন, বাকি সময়টা টাইমিং করতে ধুঁকতে দেখা যায় তাকে। তার অবদান ১৪ বলে ৮।
৮ ওভার শেষে উইকেট নেই তিনটি, দলের রান রেট কেবল পাঁচের সামান্য ওপরে। প্রয়োজন ছিল তখন একইসঙ্গে একটি জুটি ও দ্রুত রান। তামিম ও আফিফ হোসেনের জুটি প্রথমটি পেরেছে, দ্বিতীয়টি নয়।
শাদাব খানকে পরপর দুই বলে চার ও ছক্কা মারেন আফিফ। ইফতিখারকে বেরিয়ে এসে ছক্কায় ওড়ান তামিম। কিন্তু ছিল না ধারাবাহিকতা। ৪৫ রানের জুটিতে তাই লাগে ৪২ বল।
থিতু হওয়ার পর যখন প্রয়োজন ঝড় তোলার, আফিফ আউট তখনই। ২০ বলে করতে পারেন কেবল ২১ রান।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও এরপর পারেননি বড় শট খেলতে। সৌম্য সরকারের খুব বেশি করার সুযোগই ছিল না। ভরসা ছিলেন কেবল তামিম। কিন্তু দেশের সফলতম ব্যাটসম্যানও পারেননি শুরুর ঘাটতি শেষে পুষিয়ে দিতে।
শাদাবকে বাউন্ডারিতে ৪৪ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন তামিম। ওই ওভারে মারেন আরও দুটি বাউন্ডারি। ওই ওভারের পর বাকি ছিল ৪ ওভার। তামিম-মাহমুদউল্লাহ জ্বলে উঠলে হয়তো দেড়শ ছুঁতে পারত বাংলাদেশ। পারেননি কেউই।
আগের ম্যাচের মতোই রান আউট হন তামিম। ইমাদের দারুণ থ্রো সরাসরি ফেলে দেয় বেলস, তবে দৌড়ের শুরুতে শ্লথ থাকায় দায় ছিল তামিমের নিজেরও।
শেষ ওভারে আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের দুটি বাউন্ডারিতে বাংলাদেশ যেতে পারে ১৩৬ পর্যন্ত। তবে মাঝ বিরতিতেও বোঝা যাচ্ছিল, ওই স্কোর যথেষ্ট নয়। বাবর ও হাফিজের ব্যাটিংয়ে প্রমাণ হয়েছে সেটিই।
শফিউল ইসলাম যদিও নিজের প্রথম ওভারে দলকে উইকেট এনে দিয়েছিলেন আবারও। এহসান আলি আউট হন ৭ বলে শূন্য রান করে। কিন্তু বাংলাদেশের সাফল্যের শেষ ওখানেই।
রান রেটের চাপ ছিল না, বাংলাদেশের বোলিং ছিল না ধারাবাহিক। বাবর ও হাফিজ তাই এগিয়েছেন অনায়াসেই। সময় যত গড়িয়েছে, আরও নুইয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
শেষ দিকে হাফিজকে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল। মুস্তাফিজের বলে সহজ ক্যাচ ছাড়েন লিটন। ব্যর্থতার ষোলো কলা তাতে পূর্ণ হয়। ১৩১ রানের অপরাজেয় জুটিতে দলকে জিতিয়ে ফেরেন বাবর ও হাফিজ।
টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যান বাবর অপরাজিত ৬৪ করেন ৪৪ বলে। হাফিজ অপরাজিত থেকে যান ৪৯ বলে ৬৭ রান করে।
আগের দিন ব্যাটিং ব্যর্থতার পরও কিছুটা লড়াই করতে পেরেছিলেন বোলাররা। এ দিন সেই স্বস্তিও মেলেনি। বাংলাদেশ উড়ে গেছে সব বিভাগেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৬/৬ (তামিম ৬৫, নাঈম ০, মেহেদি ৯, লিটন ৮, আফিফ ২১, মাহমুদউল্লাহ ১২, সৌম্য ৫*, বিপ্লব ৮*; ইমাদ ২-০-১৬-০, আফ্রিদি ৪-০-২২-১, হাসনাইন ৪-০-২০-২, রউফ ৪-০-২৭-১, শাদাব ৩-০-২৮-১, মালিক ২-০-৯-০, ইফতিখার ১-০-১২-০)।
পাকিস্তান: ১৬.৪ ওভারে ১৩৭/১ (বাবর ৬৬*, এহসান ০, হাফিজ ৬৭*; মেহেদি ৪-০-২৮-০, শফিউল ৩-০-২৭-১, আল আমিন ৩-০-১৭-০, মুস্তাফিজ ৩-০-২৯-০, বিপ্লব ২-০-১৬-০, আফিফ ১-০-১৬-০, মাহমুদউল্লাহ ০.৪-০-৩-০)।
ফল: পাকিস্তান ৯ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ২-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: বাবর আজম