সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ‘যে ক্ষতি করেছেন’, তার মতো ক্ষতি আর কেউ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
শনিবার এশিয়াটিক সোসাইটিতে এক বক্তৃতায় ইতিহাসের এই অধ্যাপক বলেন, “জিয়াউর রহমানের মতো ক্ষতি আর কেউ বাংলাদেশের করেনি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি নষ্ট করার জন্য সংবিধানকে কয়েকবার সংশোধন করলেন।
“বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের জাতীয় বীর ঘোষণা শুধু নয়, নানা রকম সুবিধা দেওয়া হল। মুক্তিযুদ্ধ যে কোনো আদর্শ নয়, তা প্রমাণের জন্য জিয়া বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোকে মুক্ত করলেন। রাজাকারদেরও প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বানালেন।”
এশিয়াটিক সোসাইটির ড. এ আর মল্লিক ও আর এন মল্লিক মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ডের উদ্বোধনী বক্তৃতায় ‘গণহত্যার রাজনীতি’ শিরোনামে বক্তৃতা দেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
আরেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ ও খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানের কাজের ধারা বজায় রেখেছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক মামুন বলেন, “জেনারেল এরশাদ ঠিক এই কাজ করেছিলেন। খালেদা জিয়া এবং তারপর আবার নিজামী-খালেদা জিয়া একই ধারা বজায় রেখেছিলেন। খালেদা-নিজামী মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র বদলালেন।
“সরকার প্রধান হয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা করলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা জঙ্গি মৌলবাদকে বিকশিত করলেন। তিনিই বোধ হয় বিশ্বে একমাত্র সরকার প্রধান, যিনি মানবতাবিরোধী অপরাধী ও স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীদের ক্ষমতায় এনেছিলেন। শুধু তাই নয় সে সময় মানবতাবিরোধী অপরাধী মন্ত্রী মুজাহিদ বলেছিলেন, যুদ্ধাপরাধী বলে কিছু নেই।”
জিয়াউর রহমানের ‘বাংলাদেশবিরোধী কাজের’ ফিরিস্তি দিয়ে মুনতাসীর মামুন বলেন, “জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলেন, তখন বাঙালিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তিনটি কাজ করেছিলেন।“এক- সংবিধানে মৌলিক নীতি বিনষ্ট করা, যা ছিল মুক্তিযুদ্ধের অর্জন বা অন্যকথা যার ভিত্তি ছিল ত্রিশ লাখ শহীদ। দুই- স্বাধীনতাবিরোধীদের জেল থেকে মুক্ত করে স্বাধীন শুধু নয়, ক্ষমতায় আনলেন এবং ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের যে ধারা ছিল সংবিধানে তা বাতিল করলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলোর অবলেপন করলেন।”
অধ্যাপক মামুন আরো বলেন, “সংবিধান পরিবর্তন ছিল স্মৃতির সঙ্গে দূরত্ব স্থাপনের প্রথম উদ্যোগ। জয় বাংলা অলিখিতভাবে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হলে। এটি ছিল পরস্পর স্মৃতি জাগরুক রাখার প্রধান হাতিয়ার।
“যেখানে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন ও হানাদাররা আত্মসমর্পণ করেছিল, সে স্থানটিতে গড়ে তুললেন শিশুপার্ক। মুক্তিযুদ্ধের গানের স্মৃতির বদলে এলো শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’। এটি জিয়ার থিমসং-এ পরিণত হল।”
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিস্তর গবেষণা করা এই অধ্যাপক বলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলাদেশে পৃথিবীর বৃহত্তম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। যদি সময়ের মাপকাঠিতে বিচার করি তাহলে এটি পৃথিবীর বৃহত্তম গণহত্যা।
“পৃথিবীর বৃহত্তম গণহত্যা অথচ এটি চোখের আড়ালে চলে গেল কীভাবে? এর সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র জড়িত।”