প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দু’টি আঘাত সুপার সাইক্লোন আম্পান এবং কভিড-১৯ সফলভাবে মোকাবেলার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ অন্যদের শিক্ষা দিতে পারে।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে এ বিষয়ে তার নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নিবন্ধে বলেছেন, বাংলাদেশ সুপার সাইক্লোন আম্পান এবং কভিড-১৯ এর মতো দুটি বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আমরা অন্যদের অনুরূপ বিপদ মোকাবেলায় পাঠ দিতে পারি।
‘ঘূর্ণিঝড় ও করোনাভাইরাস মোকাবেলা: আমরা কীভাবে মহামারি চলাকালীন লাখ লাখ লোককে সরিয়ে নিয়েছি’ শীর্ষক নিবন্ধটি বুধবার গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। খবর বাসসের
অভিযোজন সংক্রান্ত গ্লোবাল সেন্টারের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার প্যাট্রিক ভেরকুইজেনের সঙ্গে যৌথ নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, কভিড-১৯ মহামারিতে ব্যাপক জনসাধারণের সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে সুপার সাইক্লোন আম্পান আঘাত হানার আগেই কত দ্রুত ও সাফল্যের সঙ্গে বাংলাদেশ দুই লক্ষাধিক লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছিল।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ভারত মহাসাগরের উপর তৈরি হতে শুরু করার ফলে নষ্ট করার মতো কোনো সময় ছিল না। বাংলাদেশে সামাজিক দূরত্বের কথা বিবেচনা করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নির্মিত হয়নি। তাই দেশ একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, কীভাবে ২.৪ মিলিয়ন মানুষকে কভিড-১৯ এর মতো আরও বড় বিপদে না ফেলে ঝড়ের ধ্বংসাত্মক পথ থেকে সরিয়ে নেওয়া যায়। সর্বোত্তম সময়ে বিপুল সংখ্যক লোককে সরিয়ে নেয়া সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের বিষয়। লোকজন নিরাপত্তা ছাড়া তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে নারাজ। এবার চ্যালেঞ্জ ছিল আরও বেশি জটিল। কারণ লোকজন করোনাভাইরাসে আকান্ত হওয়ার ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছিল। প্রথম সাড়াদানকারীদের নিশ্চিত করতে হচ্ছিল যে, আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়ার ফলে সংক্রমণ ঘটবে না। বাংলাদেশ অল্প সময়েই, সামাজিক দূরত্বের কিছুটা ব্যবস্থার সাথে বিদ্যমান ৪ হাজার ১৭১টি আশ্রয়কেন্দ্রের অতিরিক্ত প্রায় ১০ হাজার ৫শ’ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে।
নিবন্ধে তারা লিখেছেন, উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে ৭০ হাজারের বেশি ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি স্বেচ্ছাসেবীরা সক্রিয় ছিল।
নিবন্ধে আরো বলা হয়েছে, এ সময় মাস্ক, পানি, সাবান এবং স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়েছে। রফতানি আদেশ বাতিল হওয়ার ঝুঁকি সত্ত্বেও পোশাক শিল্প ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে সম্পৃক্ত হয়েছে।
নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড এটমোসফেরিক থেকে দেয়া পূর্বাভসের প্রেক্ষিতে মহামারির তীব্রতার মুহূর্তে এসে আম্পানের মতো একটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সময় প্রশাসন মানবজাতির সামনে উপস্থিত জলবায়ুর ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে মনোনিবেশ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড এটমোসফেরিক প্রশাসন পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, আটলান্টিক ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে পানির অস্বাভাবিক গরম তাপমাত্রার কারণে এই বছরের হারিকেন মওসুম রেকর্ড অতিক্রম করবে। এছাড়া কোভিড -১৯-এর কারণে বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে মানুষকে সুরক্ষিত রাখার কাজটি অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠবে।
শেখ হাসিনা যৌথ নিবন্ধে আরও লিখেছেন, ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর নেটওয়ার্কসহ বাংলাদেশের দুর্যোগ প্রস্তুতির ফলে আম্পানের আঘাতে ভারত ও বাংলাদেশে একশরও কম মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যে কোনো মৃত্যু দুঃখজনক। তবুও, দেশের আগাম সতর্ক ব্যবস্থা এবং পরিকল্পিতভাবে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার অনুশীলন বিগত বছরগুলোতেও হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করেছে।