বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি একটা লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ, ক্ষুদ্রব্যবসায়ী, কৃষক-শ্রমিকের কোনো উন্নতি হয়নি, উন্নতি হয়েছে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভাগাভাগি করে লুটপাট করছে তাদের।
সোমবার (২১মার্চ) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ও আজকের বাংলাদেশ এবং চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনাসভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
মেগা প্রজেক্টে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে যারা টিসিবির ট্রাকের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় ন্যায্য মূল্যে পণ্য কেনার জন্য তাদের কোনো উন্নতি হয়নি। আমার গ্রামের কৃষকের পণ্যের দাম বাড়েনি। শ্রমিক ভাইদের মজুরি বাড়েনি, তার কোনো উন্নতি হয়নি। যে শিক্ষক স্বল্প বেতনে চাকরি করেন তার কোনো উন্নতি হয়নি। ছোট ছোট ক্ষুদ্রব্যবসায়ী-হকার তাদের কোনো পরিবর্তন হয়নি। অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভাগাভাগি করে লুটপাট করছে তাদের। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি একটা লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই লুটপাটের স্বর্গরাজ্য আজকের নতুন না, এটা আওয়ামী লীগের কেমিস্ট্রির মধ্যেই আছে। যখনই তারা ক্ষমতায় যায়, তখনই তারা লুটপাট করে। সেজন্য মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী শেখ মুজিবুর রহমানের সময় বলেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নামটা পরিবর্তন করে দিয়ে নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি রাখো। আজকেও একই অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসলো তখন এই দেশে একটা চরম দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। লাখো মানুষ না খেয়ে মারা গিয়েছিল। তখন দলীয় লোকেরাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। সেই সময় শেখ মুজিবুর রহমান একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি বলেন, তখনই মুক্তিযোদ্ধাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা সবকিছু ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। সেখান থেকে দেশকে টেনে তুললেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়ে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়ে একটা মুক্ত সমাজ নির্মাণের আশা-আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলেছিলেন। আবার আমাদের দুর্ভাগ্য তারপরও আমরা সেটা রক্ষা করতে পারিনি। বাংলাদেশের যারা শত্রু তারা তাকে ধ্বংস করেছে। পরবর্তীতে আবার দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেটাও আমরা রক্ষা করতে পারিনি।
তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। তারওেআগে একটা অবৈধ কেয়ারটেকার সরকারের নাম করে মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের যে সরকার এসেছিল তাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল দেশকে বিরাজনীতিকরণ। গণতন্ত্রহীন একটা রাষ্ট্র তৈরি করা, তাই তারা করেছিল। তাদের সঙ্গে চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশকে রাজনীতিহীন করে ফেলেছে। গণতন্ত্রহীন করে ফেলেছে। দেশের মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে ছদ্দবেশী গণতন্ত্রের নাম করে আবারও বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে। সে কারণেই আজকে দেশের এই চরম দুরাবস্থা।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অথচ মন্ত্রীরা বলছেন এখনও নাকি দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে, আয় বেড়েছে। অর্থনীতিতে প্রকৃত আয় বলে একটা কথা আছে সেই প্রকৃত আয় মানুষের একটুও বাড়েনি বরং কমেছে। কালকে সিপিডি একটা প্রেস কনফারেন্স করেছে, সেখানে বলেছে সরকার মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে মুদ্রাস্ফীতি অনেক বেড়েছে।
‘বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়’আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে কোনোদিন ক্ষমতায় আসেনি। বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। পরবর্তীকালে প্রত্যেকটি নির্বাচনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনগণের ভালোবাসা নিয়ে এই দল ক্ষমতায় এসেছে। আর আপনারা (আওয়ামী রীগ), মনে আছ ২০০৬ সালে যখন ১/১১ অবৈধ সরকার এসেছিল তখন বলেছিলেন এই সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল। তখনই বলে দিয়েছিলেন, তাদের সব কাজ সেটা বৈধ অথবা অবৈধ আমরা সব ক্ষমতায় আসলে বৈধতা দেব। পরবর্তীতে সেই বৈধতা দিয়েছেন।
তিনি বলেন আজকে আমরা এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হবে, মানুষকে রক্ষা করতে হবে। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হলে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই সরকারকে ঝেটিয়ে বিদায় করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে আমরা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির কথা বলেছি। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল, যারা গণতন্ত্র ও দেশপ্রেমে বিশ্বাস করে তাদের আহ্বান জানিয়েছি আসুন সবাই শুধুমাত্র একটা লক্ষ্যে… গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলি। সেই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রমের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহমেদ খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খান, গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, শওকত মাহমুদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, দলের যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) জয়নাল আবেদিন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী আবুল হোসেন, সহ-সভাপতি মোকসেদ আলী মঙ্গলীয়া, মহানগর দক্ষিণের সদস্য ইশরাক হোসেন প্রমুখ।