ইতিহাস বিকৃতির দায়ে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইটি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে বইটির সম্পাদনা পরিষদের প্রধান ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহাকে আগামি ১২ মার্চ হাইকোর্টে তলব করা হয়েছে। তাকে ওইদিন আদালতে হাজির হয়ে বইটিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি না ছেপে কেন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি সংযোজন করে ছাপা হয়েছে, তা ব্যাখ্যা দিতে হবে।
বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস শীর্ষক বইটি প্রকাশ করা হয়। ওই বইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করে ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা ওঠার পর গত বছর এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, গ্রন্থটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশের পরপরই কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় পরিদৃষ্ট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর গ্রন্থটির বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি গ্রন্থটি রিভিউয়ের জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
এরপর গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর তথ্য বিকৃতির ওই ঘটনা অনুসন্ধান চেয় হাইকোর্টে একটি রিট করেন ভোরের পাতার সম্পাদক কাজী এরতেজা হাসান। পরে ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২ অক্টোবর রুলসহ অভিযোগ তদন্তের জন্য অনুসন্ধান কমিটি গঠনের আদেশ দেন হাইকোর্ট।
ওই আদেশ অনুযায়ী অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট সাগ্রিক অর্থনীতি) ড. মো. জাফর উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার ওই কমিটির একটি প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর বইটি বাজেয়াপ্তের পাশাপাশি শুভঙ্কর সাহাকে তলবের আদেশ দেন হাইকোর্ট।
কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বইটি প্রণয়নে সম্পাদনা কমিটির কাজের মধ্যে অসংগতি ছিল। কমিটির কাজে ধারাবাহিকতা ছিল না। নিয়মিত সভাও হতো না। এ ছাড়া, গবেষণা কমিটি ও সম্পাদনা কমিটির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল মর্মে প্রতীয়মান হয়।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতির আদেশমুলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ছবি এই বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল। জাতির জনকের ঘোষিত স্বাধীনতায় সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত এবং দুই লাখ মা-বোনের সমভ্রমের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়।’